adv
২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কে এই ধর্ষক নাইম আশরাফ

Banani-Rape-Nayeডেস্ক রিপোর্ট: বনানীর একটি হোটেলে গত ২৮ মার্চ ধর্ষণ ঘটনায় যে ৫ আসামিকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ তার অন্যতম কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এসব ধর্ষকরা পার পেয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রয়েছে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন ও তাদের রক্ষা করার জন্যে গডফাদারদের প্রভাব ও পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের টাকা খেয়ে বিষয়টি আপোষের নিরন্তর প্রচেষ্টা।
ওই ৫ ধর্ষকের অন্যতম নাইম আশরাফ যার সম্পর্কে তাদের স্বজন ও এলাকাবাসি জানিয়েছে এধরনের অপকর্ম সে বহুদিন থেকে করে আসলেও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সে বারবার পার পেয়ে গেছে। একই কারণে পুলিশ এসব ঘটনায় দফারফার মধ্যে দিয়ে দায়িত্বে অবহেলা করে। নাইমের চাচা মোয়াজ্জেম হোসেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম ও তার সাবেক স্ত্রী জানিয়েছেন ধর্ষণ, পার্টি, ভারতীয় শিল্পী এনে অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকলেও এধরনের কাজের সঙ্গে কোনো বৈধতার সম্পর্ক নেই। বিদেশি শিল্পী এনে দেশে অনুষ্ঠান করালেও বিপুল রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি।ইধহধহর-নরৎঃযফধু-ৎধঢ়ব-ঈড়ষষধমব-৬৯০ী৪০২
মোয়াজ্জেম জানান, তার আসল নাম আব্দুল হালিম। সে আমার ভাই আমজাদ হোসেনের পুত্র। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার গান্দাইল গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ একজন কৃষক ও তার মা সালেহা দিনমজুর।
২০০৪ সালে হালিম ঢাকায় আসার আগে তার ছোট ভাই নাইম আশরাফের নাম ব্যবহার করতে শুরু করে। এসএসসি পাস হালিম ওরফে নাইম আশরাফ বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটি মেয়েকে ভাগিয়ে আনে। বগুড়ার মেয়রের স্বজন হিসেবে মেয়েটির কাছে পরিচয় দেয় সে। এরপর তাকে ওই মেয়েটির স্বজনরা বেদম মারধর করে। তারপর নাইম আশরাফ ঢাকায় পালিয়ে আসলেও আরো বড় পরিসরে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম শুরু করে। এলাকায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় এলাকাবাসিরা তাকে একবার মারধর করে। এরপর সে বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করতে শুরু করে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসা যাওয়া ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের উপরতলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলে। টাকা, মদ ও মেয়ে সরবরাহে পটু নাইম আশরাফ এধরনের যোগাযোগ সৃষ্টিতে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে।ইধহধহর-জধঢ়ব-ঞযৎবব-অপপঁংবফ-ঊফরঃবফথঈড়ষষবপঃবফ
ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বলেন, নাইম আশরাফের পরিবারের কিছুই ছিল না। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকা থেকে সে ফিরে নতুন বাড়ি করে যা আমাদের কাছে বিস্ময়ের মত ব্যাপার ও অস্বাভাবিক মনে হয়। আশরাফুল আলম বলেন, দুই নারীকে ধর্ষণের কথা শুনে আমি গভীর দু:খ পেয়েছি। সে আমার আত্মীয় কিন্তু ধর্ষক হিসেবে তার বিচার চাই। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। কেন তাকে পুলিশ গ্রেফতার করছে না আমি বুঝতে পারছি না।
ধর্ষক নাইম আশরাফকে কলাবাগান ছাত্রলীগ ইউনিটে সক্রিয় হতে দেখা গেছে। এধরনের রাজনৈতিক পরিচয় সে বিভিন্ন অপকর্ম থেকে নিরাপদে থাকার উপায় হিসেবে ব্যবহার করত। ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বলেন, আত্মীয় হিসেবে তাকে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে।
ঢাকায় নাইম আশরাফ রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, মিডিয়া ব্যক্তি, খেলোয়াড়, মডেল, পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বড় ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এদের কাছে নাইম আশরাফ এক আস্থাবান ব্যক্তি। কোনো কোনো সময় সে নিজেকে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাজিপাড়া ইউনিটের প্রধান বলেও পরিচয় দেয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পুত্রের ঘনিষ্ট বন্ধু এমন পরিচয় সে ব্যবহার করে। মিরপুরে ইমেকার্স বাংলাদেশ নামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক সিসা লাউঞ্জ, রেস্টুরেন্ট’এর মালিক সে। ভারত থেকে শিল্পী অরিজিৎ সিং ও নেহা খাকারকে দেশে এনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাইম আশরাফ। আরেক ধর্ষক সাফাতের সাথে তার ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ও পারিবারিকভাবে সে ঘনিষ্ট। এক সঙ্গে পার্টি, বাসায় খাওয়া দাওয়া ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আনাগোনায় তারা বেশ ঘনিষ্ঠ। বিভিন্ন ছবিতে এর পরিচয় ও প্রমাণ মেলে।ইধহধহর-জধঢ়ব-ঘধুববস-ঝযধভধঃ-উরহহবৎ-ঊফরঃবফথঈড়ষষবপঃবফ
নাইম আশরাফ নিজেও তার এই উত্থানের পেছনে সাফাতকে ‘কিং’ হিসেবে পরিচয় দিতে কোনো কার্পণ্য করতেন না। মিরপুরে ডিওএইচএস’এ নিউজ৭১ডটকম নামে একটি অনলাইন নিউজ মিডিয়া খোলে নাইম। এ অনলাইনে রিপোর্টারদের সে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মসহ বিভিন্ন ঘাপলা অনুসন্ধানের কাজে ব্যবহার করে অভিযুক্ত বা জড়িত ব্যক্তিদের ব্লাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা আদায় করত।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, নাইম আশরাফ বা হালিম কখনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। এলাকায় নাইম আশরাফের ছবি সম্বলিত একাধিক স্বেচ্ছাসেবক লীগের পোস্টার দেখা গেছে।

নিজের ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ফার্ম ই-মেকার্সের মাধ্যমে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন মেয়েদের পটিয়ে অবৈধ কাজে বাধ্য করত নাইম। একের পর এক নারীদের পটিয়ে বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে যেতেন। নামিদামি লোকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। ঠিক একইভাবে মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের সঙ্গে একাধিক মেয়েকে পরিচয় করে দিয়েছেন।
বনানীর ধর্ষণ মামলা যখন দেশজুড়ে আলোচিত হচ্ছে, এসময় নাইম আশরাফের সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করে বিভিন্ন মিডিয়া।
ঢাকার মিরপুরে তার ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ফার্ম ই-মেকার্সের অফিস রয়েছে। ফার্মটির সে সিইও। এই ফার্মের মাধ্যমে ভারতীয় শিল্পী এনে বাংলাদেশে কনসার্টের আয়োজন করে থাকে। অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টে সে অন্তত ৭৫ লাখ টাকা আয় করেছে বলে জানিয়েছে তার এক বন্ধু। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বন্ধু বলেন, নাঈম মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে ওঠা-বসা করতো। সেই পরিচয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামের নামে অঢেল টাকার মালিক হয়েছে সে। ওই টাকা দিয়ে নারী আর মদ ছাড়া কিছুই বুঝতো না।
ওই বন্ধু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ব্যাপক ওঠা-বসা তার। ঢাবির মহসিন হলের ২০২ নম্বর কক্ষে নিয়মিত রাত কাটায় সে। এমনকি সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে এমন পরিচয় দিতো মেয়েদের। আর এভাবেই মেয়েদের পটাতেন।
নাইমের এই বন্ধু বলেন, মূলত তার বাড়ি সিরাগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্দাইল ইউনিয়নে। সে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ঘনিষ্ঠ পরিচিত। মাঝে মধ্যেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে যান। কিছু দিন আগে জাতীয় চার নেতার নামে একটি প্রোগ্রাম করবেন সেজন্য প্রস্তাবনা জমা দিয়েছেন মন্ত্রীর কাছে। আর যে সংগঠন থেকে প্রোগ্রাম করবেন সেটিও ক্যাপ্টেন শহীদ মনসুর আলীর নামে করা সংগঠন।
ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বলেন, নাইম এলাকায় দুই নম্বর ছেলে হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সে নাকি সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কমিটির প্রধান হয়েছেন। পরে শুনতে পারি সে নাকি যুবলীগেরও সদস্য।
বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে একাধিক মেয়ের সর্বনাশের কথা জানা গেছে। পুরান ঢাকার এক ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়েছিল। এরপর ওই মেয়ে নিজেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে। তার সম্পর্কে একাধিক বিয়ের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
নাঈম আশরাফ এর আগে একুশে টেলিভিশনে কাজ করেছে বলে জানিয়েছে তারই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এরপর আইটিতে পারদর্শী হন। আইটিতে পারদর্শী হওয়ার পর সে অন্তত চারটি টেলিভিশনের আইটি ডিপার্টমেন্টে কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দেশ টিভি, গান বাংলা টিভি অন্যতম।
গত ২৮ মার্চ রাতে বনানী দি রেইন ট্রি হোটেলে দুই বন্ধু জোর করে রাতভর ধর্ষণ করেন বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে। ধর্ষণের সেই চিত্র মোবাইলে ভিডিও করেন আরো তিন বন্ধু। আবারও কোনো জায়গায় দৈহিকভাবে মিলিত না হলে ধর্ষণের সেই ভিডিও চিত্র নেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখানোয় ঘটনার ৪০ দিন পর বনানী থানায় মামলা করেন ওই দুই ছাত্রী। মামলার ৫ দিন পার হলেও পুলিশ এখনো ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া