সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহসিন আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক : সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলে জানিয়েছেন তার ছোটভাই মুস্তাক আলী।
আগামীকাল মঙ্গলবার মহসিন আলীর মরদেহ দেশে আনা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তাকে নিজ এলাকা মৌলভীবাজারে দাফন করা হবে।
মহসিন আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার এবং বিরোধী দলীয় নেতা। শোক প্রস্থাব উত্থাপন করা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রথমে তাকে নিবিড় পর্যবেণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। এ সময় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে ৫ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য মন্ত্রীকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। মন্ত্রীর সঙ্গে তার স্ত্রী ও মেয়ে সিঙ্গাপুরে যান।
সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আশরাফ আলী এবং মাতা আছকিরুন্নেছা খানম। ছাত্রলীগের একজন সদস্য হিসেবে মহসিন আলী ছাত্রজীবনেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৭১ এর ২৩ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহকুমা/জেলা রেডক্রিসেন্ট এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
মহসিন আলী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মৌলভীবাজার পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে মোট তিনবার নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭-মৌলভীবাজার-৩ আসন হতে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি ২০১৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি তাঁকে ‘আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক-২০১৪’ প্রদান করে এবং ‘হ্যালো কলকাতা’ নামে কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাঁকে ‘নেহেরু সাম্য সম্মাননা-২০১৪’ পুরস্কারে ভূষিত করে।