ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নারী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি এবার বেশ কম। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণেই এটা হয়েছে বলে ধারণার করা হচ্ছে। অনেক সময় বাবা-মা বিয়ের আগে তাদের মেয়েকে ভোটার করতে চান না। ভোটার করতে জন্ম সনদ লাগে। গ্রাম এলাকায় জন্ম সনদ যোগাড় করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না।
এছাড়া পরিচয়পত্র সংশোধন, এলাকা স্থানান্তর বা ঠিকানা পরিবর্তনের কারণেও অনেক নারী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না। আদমশুমারিতে নারী ও পুরুষের মধ্যে শতকরা ৫ ভাগ ব্যবধান হলেও হালনাগাদে তা শতকরা ৪০ ভাগ দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) উদ্বিগ্ন বলে জানা গেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ দাবি করেছেন, অভিভাবকরা বিয়ের আগে মেয়েদের ভোটায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চান না। বয়স গোপন রাখার জন্যই তারা এ কৌশল নিয়ে থাকেন। ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হয়। এ সনদ সংগ্রহ বেশ কষ্টসাধ্য। হয়রানি থেকে রক্ষা পেতেই নারীরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে অনিহা দেখান। অনেকে আবার পর্দার কারণে ছবি তুলতে চান না।
তবে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বললেন ভিন্ন কথা। তার মতে, দায়িত্বে অবহেলার কারণেই হালনাগাদে নারী ভোটার কম হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এ নিয়ে অভিযোগও করেছেন তিনি।
গত ৭ আগস্ট চট্টগ্রামের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন আবদুল মোবারক। প্রত্যক্ষ করেন নারী ভোটার কম হওয়ার কারণ। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, মীরসরাই, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালিয়, পটিয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদে উদ্বেগজনকভাবে নারী ভোটার কম হয়েছে। পরে তিনি নারী ভোটার কম হওয়ার কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিনকে প্রতিবেদন আকারে জানান।
পরির্দশন প্রতিবেদনে বলা হয়, আদমশুমারিতে নারী ও পুরুষের মধ্যে শতকরা ৫ ভাগ ব্যবধান হলেও হালনাগাদে শতকরা ৪০ ভাগ ব্যবধান দেখা গেছে। এতে প্রমাণিত হয়, ভোটার তালিকা হালনাগাদে টাকা ব্যয় হলেও কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হয়নি। এছাড়া সংশ্লিষ্টরা সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি বলেও তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
এতে আরো বলা হয়, চট্টগ্রমের বিভিন্ন উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য বছরাধিককাল আগে যেসব আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়েছিল, সেগুলোও নিষ্পত্তি হয়নি। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে এসব আবেদনের তালিকা পাঠাতে বললে তিনি তা এনআইডি মহাপরিচালকের কার্যালয়ে পাঠান। পরবর্তীতে এনআইডি মহাপরিচালককে বলার পর তিনি কিছু সংখ্যক পরিচয়পত্র সংশোধন করে পাঠান। তবে এখনো অনেক বাকি রয়েছে। অন্যান্য জেলাতেও এ ধরনের অবস্থা। এভাবে দুর্নীতিরও সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া অনেক ভোটারের আইডি কার্ড নির্ধারিত সময় বিতরণ করা হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। একইভাবে ভোটার স্থানান্তরের ক্ষেত্রেও ভোটারদের হয়রানি রোধে কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক।
মোবারক বলেন, ‘ভোটার এলাকা স্থানান্তর ও ঠিকানা পরিবর্তনের জন্যও অনেক আবেদন থানা বা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। সেগুলো জেলা থেকে এনআইডি শাখাতে পাঠানো হয়। কিন্তু এ ধরনের অনেক আবেদন এনআইডি শাখায় অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানের পথ ইসিকেই খুঁজতে হবে।’
সিইসিকে তিনি জানান, উপজেলা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অসতর্কতার কারণে চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মহানগরে ভোটার তালিকা হালনাগাদে রোহিঙ্গাদের ব্যাপার সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।
ইসি কমিশনার মোবারকের এই পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিনসহ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে গত ১৫ মে থেকে তিনটি ধাপে ভোটার তালিকা হালনাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে হালনাগাদের কাজ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় পর্যায়ের কয়েকটি উপজেলা বাকি থাকলেও সেগুলো ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ ১২০টি উপজেলাতে তৃতীয় ধাপের হালনাগাদ কাজ শুরু হয়েছে।