‘ডাইনি’ বলে নির্যাতন
ডেস্ক রিপোর্ট : ‘ডাইনি’ আখ্যা দিয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে শুকরমনি মুর্মুষ ওরফে সালবী হাসদা (৫৫) নামে এক আদিবাসী নারীকে অমানুসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় গত ৫ দিন ধরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তানোর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
একই গোত্রের আসিবাসীদের ধারণা শুকুরমণি একজন ডাইনি। তার কারণে পরিবারের শিশুদের মধ্যে অসুখ লেগেই আছে। কেউ মারা গেলে সোজা দায় চাপানো হচ্ছে শুকুরমণির নামেই। বলা হচ্ছে শুকুরমণি ‘ডাইনি’। তিনি সবাইকে ‘খেয়ে’ ফেলছে। বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলার মোহনপুরের আদিবাসী পল্লীতে এমন গুজব ছড়ানো হলেও গত শুক্রবার তার ওপর অমানুসিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর থেকেই তানোর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিতসাধীন শুকুরমণি।
শুকুরমণির স্বামীর নাম মতি হেম্ব্রন। অন্যের জমিতে কামলা খাটেন। মতি হেম্ব্রনের দ্বিতীয় স্ত্রী শুকুরমণি। ৩৭ বছর আগে প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর মতি হেম্ব্রন তাকে বিয়ে করে। আগেই স্ত্রীর দুই সন্তান রয়েছে। এরা হলেন-অনেশ্বর হেম্ব্রন ও বানেশ্বর হেম্ব্রন।
এই অনেম্বর ও বানেশ্বর দুই ভাই আর গ্রামের মোড়ল মঙ্গল হেম্ব্রন ও রামেশ্বর হাসদা মিলেই তার ওপর অমানুসিক নির্যাতন চালায়।
গ্রামবাসী সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনেশ্বরের সাত বছর বয়সি শিশু সন্তান অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। দিনাজপুরের কোতোয়ালি এলাকার কবিরাজ বিষু কিস্কু দেখে শুনে ঘোষণা দেয় এ গ্রামে একটি ডাইনি রয়েছে। তার নাম শুকুরমনি। তার কারণেই শিশুরা অসুখে পড়লে আর ভালো হচ্ছে না। এরআগে এক শিশু মারা গেলেও তার দায় এসে পড়ে শুকুরমণির ওপর। তিনি নাকি সবাইকে খেয়ে ফেলছে। এ গুজবেই তার ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু হয়।
সর্বশেষ শুক্রবার তার ওপর অমানুসিক নির্যাতন চালানো হয়। প্রকাশ্যে অমানসিক নির্যাতনে শুকুরমণি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে তানোর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে দেয়। সেই থেকে সেখানেই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
তানোর উপজেলা আদিবাসী পারগানা পরিষদের সভাপতি দুর্বীণ কিস্কু অভিযোগ করেন, কথিত কবিরাজের ভুল ব্যাখ্যায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। গ্রামের মোড়ল মঙ্গল হেম্ব্রন ও রামেশ্বর হাসদা এবং তার দুই সত ছেলে অনেম্বর ও বানেশ্বর তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়েছে।
তিনি জানান, এ ব্যাপারে আদিবাসী পারগানার পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মামলায় কথিত কবিরাজ, গ্রামের দুই মোড়ল এবং তার দুই ছেলেকে আসামি করা হবে।