adv
২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশকে হুমকি ভারতীয় বোর্ড প্রধানের

image_74644_0ঢাকা: বিশ্ব ক্রিকেটকে হত্যার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্ব ক্রিকেটের তিন মোড়ল ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। এ জন্য বল প্রয়োগেও পিছপা হচ্ছে না তারা। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সমর্থন পেতে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন।

সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আইসিসির এগজিকিউটিভ বোর্ডের বৈঠকের আগের দিনই তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের ওপর বারবার এই চাপ সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

 
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আইসিসির ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম প্রভাবশালী বৈঠক মঙ্গলবার দুবাইয়ে শুরু হচ্ছে। শ্রীনিবাসনের ভারত যা চাইছে তা যদি সত্যি করে ফেলতে পারে বিশ্ব ক্রিকেটের রূপরেখা বদলে যাবে। একই সঙ্গে ক্রিকেটমহলের গরিষ্ঠ অংশের মতে, খুন হয়ে যাবে ক্রিকেটের বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া।
 
ভারত যা চাইছে তার জন্য সাত পূর্ণসদস্য দেশের সম্মতি দরকার। এমনিতে আইসিসির সংবিধান বদলের জন্য আট দেশের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু এক্ষেত্রে ম্যাজিক ফিগার হলো সাত। সোমবার রাত পর্যন্ত ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ছয়তে আটকে রয়েছে। চাই আরও এক। সে জন্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসানের ওপর বারবার চাপ সৃষ্টি করা হলো যে তারা যেন তিন দেশের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।
 
গোটা পরিকল্পনা যার মস্তিষ্কপ্রসূত, সেই নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন মা মারা যাওয়ায় দুবাই আসতে পারেননি। তার হয়ে বাংলাদেশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন, আইপিএল কর্মকর্তা সুন্দর রামন এবং সচিব সঞ্জয় প্যাটেল। বাংলাদেশ রাজি হচ্ছে না দেখে এবার চাপ দেয়ার জন্য স্কাইপেতে শ্রীনিবাসনকে ডেকে আনা হয়। শ্রীনি একটা সময় উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনারা রাজি না হলে আমরা এ বছর বাংলাদেশে টি- টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ খেলব না। এশিয়া কাপ থেকেও নাম তুলে নেব। দেখি আপনারা কী করেন।
 
এ রকমই চাপের মধ্যে পড়ে এদিন জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ শ্রীনিবাসনদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা পিটার চিঙ্গোকা বিশ্ব ক্রিকেটে তার শুভানুধ্যায়ীদের অকপটে বলেন, ‘জানি নোংরা ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হতে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু করার নেই। আমাদের বোর্ডের টাকা দরকার। ভারত অনেক টাকা দেবে বলেছে।’
 
শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানকে অবশ্য ভারত বহু চেষ্টাতেও কাতারে টানতে পারেনি। যদিও পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক রামিজ রাজা এ দিন সংবাদসংস্থাকে বলেন, ‘দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে ভারতের প্রস্তাবে আমাদের রাজি হয়ে যাওয়া উচিত।’
 
ক্রিকেটমহল যা শুনে রামিজের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। এশীয় ক্রিকেট সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বললেন, ‘রামিজ চিরকাল সাহেবদের পা চেটে এসেছে। এই বিবৃতি ও দেবে তাতে আর আশ্চর্য কী?’ প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যে ক্লাইভ লয়েড অবশ্য ভারতের আনা প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘এটা অবিলম্বে প্রত্যাহার হওয়া উচিত।’
 
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বিশ্ব ক্রিকেটে ক্ষমতার দুটো স্তর হয়ে যাবে। একটা দিকে থাকবে বাকি সাতটা দেশ। তাদের মধ্যে অবনমন থাকবে। বাকি তিন দেশ হবে তিন প্রধান। নতুন প্রস্তাবে ভারত-ইংল্যান্ড-ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য থাকছে বিপুল ক্ষমতা। এরা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি টাকা পাবে। সব সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেবে। সব বড় টুর্নামেন্ট নিজের দেশে করবে। এমনকি এরা পয়েন্ট তালিকায় সবার শেষ হলেও এদের জন্য অবনমনের ব্যবস্থা থাকবে না।
 
জাতিসংঘে যেমন আলাদা নিরাপত্তা পরিষদ রয়েছে এটা তেমন বিশেষ সুবিধাভোগ করা তিন সদস্য গোষ্ঠী। সোমবার কলকাতায় ক্রিকেট ইতিহাসবিদ এবং বিশিষ্ট ক্রিকেট লেখক রামচন্দ্র গুহ উত্তেজিতভাবে বলেন, ‘এ রকম জঘন্য আইন কেউ কখনো শুনেছে যে শেষ হলেও তোমার জন্য অবনমন নেই?’
 
জগমোহন ডালমিয়া আইসিসিতে থাকার সময় কৃষ্ণাঙ্গ দেশগুলোকে এক করে যে সফল মডেল তৈরি করেছিলেন, এর ফলে তা ভেঙে খানখান। এ দিন এশীয় ক্রিকেট কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘এশিয়াতেই তো সব কটা দেশ ভারতের বিপক্ষে চলে গেল। কাদের সঙ্গে ওরা খেলবে?’ ঢাকা থেকে এক ক্রিকেট কর্মকর্তা এ দিন বললেন, ‘ভারত যত হুমকিই দিক না কেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট মাথা নত করবেন না। করলে আমাদের দেশের কাছে উনি মুখ দেখাতে পারবেন না।’ শোনা যাচ্ছে ব্যাপারটা বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবধি গড়িয়েছে।
 
এদিকে অভূতপূর্ব ভাবে পাঁচ প্রাক্তন আইসিসি প্রেসিডেন্ট এ দিন বিভিন্ন সদস্যদের কাছে মেইল করে আবেদন করেছেন, তিন প্রধানের চাপের কাছে মাথা না নোয়ানোর। ম্যালকম গ্রে, ম্যালকম স্পিড, এহসান মানি, শাহরিয়ার খান এবং তৌফিক জিয়া। এরা ডালমিয়াকেও ফোন করেছিলেন। যদি তিনিও আবেদনে সই করেন। এখানে সই করা মানে শ্রীনির বিরুদ্ধে যাওয়া। ডালমিয়া স্বভাবতই রাজি হননি। কিন্তু তার নৈতিক সমর্থন কি অন্য দেশের দিকে? শ্রীনির প্রস্তাবে তো তার মডেলটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। ডালমিয়া বলেন, ‘দুদিন দেখুন না প্রস্তাবটা আদৌ পাস হয় কি না। পাস হলে না হয় কথা বলা যাবে।’
 
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, খোদ ভারতীয় ক্রিকেট মহলেও এমন ধারণা জন্মাচ্ছে, নিজের স্বল্পকালীন লাভের কথা ভাবতে গিয়ে দীর্ঘকালীন ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বনাশ করছেন শ্রীনিবাসন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো একত্রিত হয়ে যে জোট তৈরি হয়েছিল সেটা এই প্রস্তাব দ্বারা তিনি শুধু ভেঙেই দেননি, প্রচণ্ড হানাহানির সম্পর্কও তৈরি করে দিয়েছেন। এরা কেউ আর ভারতকে বিশ্বাস করতে রাজি নয়। সবচেয়ে বড় কথা যাদের সঙ্গে ভারত নতুন জোট বাঁধল সেই শ্বেতাঙ্গ দুই দেশ কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা?
 
ডালমিয়া এমন আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু অনেকেরই মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে কোনও ক্রিকেটীয় ইস্যুতে ভোটাভুটি হলে তিন প্রধানের মধ্যে ভারতইতো সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়ে পড়তে পারে। হেরে যেতে পারে।

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ
January 2014
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া