সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের অঢেল অর্থকড়ি
ডেস্ক রিপোর্ট : পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্ব বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বানিয়ে দিয়েছে বিগত মহাজোট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হককে। একইসঙ্গে সাতক্ষীয়া-৩ আসনের সরকারদলীয় এ সংসদ সদস্যের স্ত্রী ইলা হক ও ছেলে জিয়াউল হকের নামেও হয়েছে বিপুল সম্পদ।
দুদকের প্রতিবেদনে রুহুল হকের এসব সম্পদ ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে ধরা দিয়েছে। যেসব সম্পদের বেশকিছু ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার রুহুল হকের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন জমা হয়। দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশন এ প্রতিবেদন এখন যাছাই করছে। স্বচ্ছতার জন্য এ প্রতিবেদনের কয়েকটি দিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পুনরায় যাছাই করতে বলেছে কমিশন। পুন:যাছাইয়ের পর এসব সম্পদের অস্তিত্ব পেলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেবে কমিশন।
মামলা অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এ বিষয়ে আগাম মন্তব্য করা ঠিক হবে না। প্রতিবেদনটি এখনও আমার দেখা হয়নি। যাছাই করে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- রুহল হকের প্রায় আড়াই কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। যে সম্পদের সঙ্গে তার আয়ের সম্পর্ক নেই।
দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে- রুহুল হক অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন যা ২৭(১) ধারায় অপরাধ। দুদক আইনে এই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ৭ বছর কারাদ-ের বিধান রয়েছে।
এদিকে গত ৭ মাস অনুসন্ধানে দুদক রাজউক, জেলা রেজিস্ট্রার দপ্তর, সাব-রেজিস্ট্রি, ভূমি অফিস, ডাক বিভাগ, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, স্টক এক্সচেঞ্জ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানিসহ প্রায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান চালিয়ে রুহুল হকের সম্পদের হদিস পায়।
এদিকে রুহুল হকের ওপর কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল হলেও তার স্ত্রী ইলা হক এবং ছেলে জিয়াউল হকের প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়নি। সূত্রমতে, কমিশন স্ত্রী ও পুত্রের অনুসন্ধান পৃথকভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
র“হুল ও তার স্ত্রী-পুত্রের অবৈধ সম্পদের অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আ ফ ম রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালেন্স গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ১০ গুণ। ব্যাংক ব্যালান্সের অধিকাংশ তার স্ত্রী ইলা হকের নামে। পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা টাকা ছিল ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ টাকা। এখন তাদের ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৩ টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রী ইলা হকের নামে ব্যাংক ব্যালান্স ছিল মাত্র ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। এখন আছে ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬৫ গুণ।
তবে গত ২৪ ফেব্র“য়ারি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের রুহুল হক বলেন, স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ টাকার স্থলে ভুল করে হলফনামায় ৭ কোটি লেখা হয়ে গেছে।
অন্যদিকে রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালান্স ২০০৮ সালে ছিল প্রায় ৮৮ লাখ। পাঁচ বছর পরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুসারে, সামগ্রিকভাবে ২০০৮ সালের তুলনায় র“হুল হকের অস্থাবর সম্পদ চারগুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে তিনি এবং তাঁর স্ত্রীর মোট অ¯’াবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি টাকার কিছু বেশি। ২০১৩ সালে সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালান্স হিসেবে রাখা আছে। এককভাবে তাঁর স্ত্রী ইলা হকের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেছে আটগুণ।