বাংলার খান থেকে জামায়াতের খাজাঞ্চি
ডেস্ক রিপাের্ট : মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামের মরহুম তৈয়ব আলীর দ্বিতীয় ছেলে মীর কাসেম আলী ওরফে মিন্টু। তার জন্ম ১৯৫২ সালে। বাবা তৈয়ব আলী ছিলেন চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিসের কর্মচারী।
নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে ছিল তাদের বাসা। চট্টগ্রামের মানুষ তাকে মিন্টু নামেই জানে।
একাত্তরে মীর কাসেম আলী পরিচিত ছিলেন ‘বাঙালি খান’ নামে। বদর বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক ও চট্টগ্রাম গণহত্যার নেপথ্যনায়ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
১৯৭৮ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পান মীর কাসেম।
সময়ের পরিক্রমায় তিনি জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান অর্থের যোগানদাতা হয়ে উঠেন। জামায়াতকে অর্থনীতির শক্তিশালীভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে কাজ করে আসছেন। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যায় করে লবিস্ট নিয়োগও দিয়েছিলেন মীর কাসেম।
মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস কাসেম আলী রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে দ্রুত নিজেরও ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছেন। একাত্তরের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কাসেম চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। সেই সূত্রেই তিনি চট্টগ্রামে আল-বদর বাহিনীর নেতার দায়িত্ব পান।
ওই বছরের ৭ নভেম্বর দলে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন।
মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে রাজাকার আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন।
১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের আমলে মীর কাসেমের প্রাতিষ্ঠানিক উত্থান হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) গঠনের মাধ্যমে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
ব্যাংক গঠনের পর চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, গণমাধ্যম ও শিক্ষা সব খাতেই বিচরণ ঘটে তার।
মীর কাসেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন ডালিম হোটেলে রাজাকার বাহিনীর বন্দিশিবির খোলা হয়েছিল। বিজয়ের একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর ডালিম হোটেল থেকে ৩৫০ জন বন্দীর লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা প্রণয়ণনকারীদের অন্যতম নায়ক ছিলেন মীর কাসেম।