adv
২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ কোটি ২৭ লাখ ডলার ঋণ বাতিল করলো বিশ্বব্যাংক

wwwww_14171420150705105117_92708ডেস্ক রিপোর্ট : বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ দেখিয়ে গ্রামে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি ঋণের প্রায় অর্ধেকই বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক। বাতিল করা ঋণের পরিমাণ তিন কোটি ২৭ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকার বেশি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দেশের ২০ জেলার ১৬ লাখ মানুষকে সুবিধা দিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অধিদপ্তরের দাবি, দরপত্র জটিলতাসহ যৌক্তিক কিছু কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে। যথাযথভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার পরও বিশ্বব্যাংক তা আমলে নেয়নি।

অনিয়ম কিংবা বাস্তবায়ন অদতার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বাতিলের ঘটনা নতুন নয়। গত অর্থবছরে ১৪টি প্রকল্পে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ঋণ বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এ বিবেচনায় কাজ শুরু হওয়ার পর গ্রামে পানি সরবরাহের এ প্রকল্পে অর্থ বাতিলের পরিমাণ অনেক বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়ন চলাকালীন এর আগে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় অর্থ বাতিলের ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালে। ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পে জালিয়াতি ও অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে প্রায় নয় কোটি ডলার ঋণ বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জুন মাসে গ্রামে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়নে সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার (৫৮৫ কোটি টাকা) ঋণ দেওয়ার চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে বিশ্বব্যাংকের একটি মিশন গত ফেব্র“য়ারিতে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। অবশিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ সম্ভব নয় বিধায় তারা প্রকল্পের পরিধি কমিয়ে আনার সুপারিশ করে। বিশ্বব্যাংকের ঋণের চার কোটি ২৩ লাখ ডলার রেখে বাকি ঋণ বাতিলের সুপারিশ করে মিশন। মিশনের সুপারিশ সম্প্রতি কার্যকর করেছে বিশ্বব্যাংক।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতা রয়েছে। কয়েক দফা চেষ্টা করেও বাস্তবায়নে কোনো গতি আনা যায়নি। এ জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অর্থ ফেরত নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বাতিল অর্থ অন্য প্রকল্পে দেওয়া হতে পারে।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এ কে এম ইব্রাহীম জানান, বাস্তবায়নে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো গাফিলতি ছিল না। প্রকল্প নকশায় ত্র“টি থাকার কারণে বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মিশন বিষয়টি পর্যালোচনা করে কিছু অর্থ ফেরত নিয়েছে। তবে পরে প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব এ সপ্তাহেই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

ইআরডি সূত্র জানায়, চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের তিন বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও ৩ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ৬৮২ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন করার কথা ৫৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মার্চ পর্যন্ত মাত্র ২১ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

ইআরডির কাছে পাঠানো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রকল্পের কয়েকটি জটিল অংশ ছিল। এর মধ্যে ১২৫টি 'পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম' নির্মাণে ৩০ শতাংশ অর্থ স্পন্সর বা স্থানীয় কমিউনিটির মাধ্যমে হওয়ার কথা। পর্যাপ্ত স্পন্সরের অভাবে বারবার দরপত্র আহবান করতে হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প অনুমোদনের পর কারিগরি সহায়তা ফার্ম নিয়োগ দিতে প্রায় দেড় বছর লেগে যায়, যা বাস্তবায়ন ধীরগতির অন্যতম কারণ।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ) একরাম হোসেন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় বেশ কিছু সমস্যা ছিল। বিশেষ করে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পানি সরবরাহের একটি অংশ ছিল, যেটি বাংলাদেশের প্রোপটে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। ফলে কাঙ্কিত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এভাবে প্রকল্পের অর্থ বাতিল দুঃখজনক। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার নেতৃত্বে পরিবর্তন হলে বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়। আবার প্রকল্প পরিচালকদের অদতা স্থবিরতার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেকে ক্রয়নীতি ঠিকমতো বোঝেন না। দাতা সংস্থাকে ঠিকমতো রিপোর্টও লিখতে পারেন না। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া