লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে দেশের পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা!
ডেস্ক রিপোর্ট : সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মুক্তি পাওয়ায় দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে। অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে দেশের স্বাভাবিক অবস্থা। বিএনপিসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছে। জামায়াতে ইসলামসহ ইসলামভিত্তিকরাজনৈতিক দল ও হেফাজতে ইসলামসহ দেশের সব ইসলামী সংগঠন এবং সংস্থাগুলো গত কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ ও বিবৃতি দিয়ে আসছে। তার জামিন বাতিল, গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে।
এ ইস্যু দেশব্যাপী বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না দিতে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে হেফাজতে ইসলামে শীর্ষ নেতাদের অনুরোধও করতে হয়েছে। দফায় দফায় মিটিং করতে হয়েছে হেফাজতে ইসলামের আমিরের সঙ্গে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠায় বেকায়দায় পড়েছে সরকার। সরকারের ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে লতিফ সিদ্দিকী মুক্তি পাওয়ায় সরকারের লাভ-ক্ষতি নিয়ে। কেনো এ ইস্যুটিকে হঠাত করে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে সরকারের ভেতরে। এ ইস্যুতে জাতীয় রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব নিয়েও শঙ্কায় পড়েছে সরকার। এ ইস্যুটি শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যায় তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
জানা গেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে শুক্রবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে বড় ধরনের কর্মসূচি না দিতে পুলিশের আইজিপির পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের আমিরকে বিশেষ অনুরোধও করা হয়েছে। একই দিন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার, জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসপি রবিউল ইসলাম ও হাটহাজারী থানার ওসি মোহাম্মদ ইসমাঈল মাওলানা শাহ আহমদ শফীসহ হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেও কর্মসূচি সিথিল করতে প্রাশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীকে মুক্ত রেখে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ঘরে ফিরবে না বলে বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাফ জানিয়েছে দিয়েছেন মাওলানা শাহ আহমদ শফী।
এর আগে গত বুধবারও শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এডিশনাল এসপি নাঈমুল হাসান, এএসপি রবীউল ইসলাম এবং হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইসমাঈল। ওইদিনও পুলিশের পক্ষ থেকে একই অনুরোধ করা হয়।
এদিকে গত ২৯ জুন সোমবার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় তাকে ফের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবারও জাতীয় মসজিদের সামনে বিভিন্ন ইসলামী দল ও তৌহিদী জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। জাতীয় মসজিদ ছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রায় সব বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ও পৌর শহরে আওয়ামী লীগের সাবেক এ নীতিনির্ধারককে ফের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেয়া হয়েছে সরকারকে। ইসলামী দলগুলো থেকে বলা হয়েছে, লতিফ সিদ্দিকীতে গ্রেফতারের দাবি কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটি ঈমান ও আক্বিদার বিষয়। মুসলমানরা ঈমান রক্ষায় এ দাবি জানাচ্ছেন।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে ফের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সংগঠনটি এ ঘোষণা দেয়। এসময় হেফাজত নেতারা বলেন, সরকার ইচ্ছে করেই লতিফ সিদ্দিকীকে মুক্তি দিয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। চলতি সংসদ অধিবেশনেই নাস্তিক-মুরতাদদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাসের দাবিও করেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র টাঙ্গাইল জেলা সমিতির মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ততকালীন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ওই সভায় পবিত্র হজ ও তাবলীগ জামায়াত নিয়ে কটূক্তি করেন তখনকার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, 'আমি হজ ও তাবলিগ জামায়াতের বিরোধী। এ হজ যে কতো ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। এই হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরব গেছেন। এদের কোনো কাজ নেই। কোনো প্রডাকশন নেই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।'
অনুষ্ঠানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় 'সরকারের কেউ নন' এবং 'কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ারও কেউ নন' মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকরা অনুষ্ঠানস্থলেই ক্ষোভ প্রকাশ ও হৈচৈ শুরু করেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন তিনি। তার এসব মন্তব্য দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। দেশজুড়ে তাকে গ্রেফতার ও বিচারসহ মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের মুখে তাকে দল ও মন্ত্রী সভা থেকে বহিস্কার করা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতদানের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সারাদেশে ২৭টি মামলা হয়েছিল। গত ২৩ জুন ১০টি এবং গত ২৬ মে সাতটি মামলায় তাকে অর্ন্তর্বতীকালীন জামিন দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। বাকি ১০টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকায় জামিন চাননি লতিফ সিদ্দিকী। ২৯ জুন সোমবার তিনি জামিনে মুক্তি পান।