পিছু না হটার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক এবং সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।প্রথম দফায় দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এমন অবস্থানের কথা জানান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘোষিত সময়েই নির্বাচন হবে। কমিশন ঘোষিত তফসিলের পরির্তন মানবে না আওয়ামী লীগ।কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের পর সিনিয়র নেতাদের নিয়ে আরেকটি বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম বৈঠক বিকেল সাড়ে চারটা একবার বিরতি দিয়ে রাত আটটা পর্যন্ত চলে। পরের বৈঠকটি রাত নয়টা থেকে প্রায় এগারোটা পর্যন্ত চলে। এই বৈঠকে সারা দেশে সাংগঠনিকভাবে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার সিদ্ধান্ত হয়।
দুটি বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা, বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন, জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো, মন্ত্রিত্ব ও উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ ও সাংগঠনিক বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। রুদ্ধদ্বার দ্বিতীয় বৈঠকেও নির্বাচন থেকে পিছু না হটার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য মোকাবিলায় প্রয়োজনে আরো কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে জাতিসংঘ দূত তারানকো ফেরার পর সরকার আরো কঠোর হবে।জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা বুধবার রাতেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। তবে তাকে পাননি। আজ বৃহস্পতিবারও সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।বৈঠক সূত্র জানায়, সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগ মার খাওয়ার বিষয়টি বৈঠকে উপস্থাপন করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, “দেশের অনেক জায়গায় নেতাকর্মীদের মারা হচ্ছে। আমরা আর কত মার খাব?”
তখন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও শেখ সেলিম বলেন, আর মার খাওয়ার সময় নেই, এখন প্রতিরোধ করতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত অন্যরাও তাতে সমর্থন জানালে সিদ্ধান্ত হয় যে, সারা দেশে জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলো এবং সব প্রার্থীকে নিজ নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে নাশকতা প্রতিরোধ করবে। এ লক্ষ্যে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হবে।এ প্রসঙ্গ নিয়ে আরো বক্তব্য দেন নূহ-উল-আলম লেনিন, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান, কৃষি সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক, মুন্নুজান সুফিয়ান, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা।দ্বিতীয় বৈঠকে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা গহর রিজভী উপস্থিত ছিলেন
সূত্র জানায়, বৈঠকে সীতাকুণ্ডে বারবার নাশকতা রোধে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. হাছান মাহমুদ ও কার্যনিবাহী সদস্য আমিনুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দলীয় সভানেত্রী বলেন, স্থানীয় থানা আওয়ামী লীগ তা প্রতিরোধ করতে পারছে না, প্রয়োজনে থানা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করারও নির্দেশ দেন তিনি।সূত্র জানায়, বৈঠকে আগামী ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে সারা দেশে নির্বাচনী সফরের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে আবার বৈঠক করা হবে। দলের সিনিয়র নেতাদের বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হবে। বৈঠকে জানানো হয়, নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে অনেক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, অনেকে অংশ নেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে