২৪ বছর আগের ঘটনা- মঙ্গলবার রাতে আড়াই ঘণ্টার অভিযান, গ্রেপ্তার আশিষ, আটক মডেলসহ দুই নারী
ডেস্ক রিপাের্ট : প্রায় আড়াই ঘণ্টা র্যাবের অভিযান। ঘটনাস্থল ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে। দুই যুগ আগে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রের এক নম্বর আসামি এই আশিষ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আশিষকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ মদ ও বিয়ার। এ ছাড়া আটক হন দুই নারী। এদের মধ্যে একজন মডেল। এই দুই নারীর সঙ্গে আশিষের কী সম্পর্ক তা জিজ্ঞাসাবাদে বের করা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
রাত ১২টার দিকে আশিষকে নিয়ে র্যাবের একটি সাদা মাইক্রোবাস চলে যায় সংস্থাটির সদরদপ্তরের দিকে। এসময় আশিষ একটি হলুদ রঙের গেঞ্জি পরিহিত ছিলেন। আশিষকে বহন করা গাড়ির পেছনে আরেকটি মাইক্রোবাসে তোলা হয় ওই দুই নারীকে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আশিষ রায় চৌধুরীকে র্যাব সদরদপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারপর বুধবার থানায় হস্তান্তর। মাদক উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করবে র্যা ব।
এর আগে রাত সাড়ে দশটার দিকে র্যাব মুখপাত্র মঈন জানান, ২৪ বছর আগে চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক ও চার্জশিটভুক্ত ১ নম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরী বোতল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আশিষ রিজেন্ট এয়াওয়েজের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) বলেও জানান র্যাব মুখপাত্র।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী এ মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন— আদনান সিদ্দিকী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারেক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় এক আসামি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এমএ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় গত ২০ মার্চ ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২। পরোয়ানাভুক্ত অন্য দুই আসামি হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান।
এরপর গত ২০ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ মার্চ দিন ধার্য করেন। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত তিনজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।