adv
২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিবির ক্যাডার সাজ্জাদও ‘লাল তালিকায়’

sazzadআন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিশধারী ৫৯ বাংলাদেশির মধ্যে অন্যতম ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খান। তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ ৮ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যার কলঙ্কিত ঘটনা। ২০০০ সালের ১২ জুলাই জেলার বহদ্দারহাট এলাকায় সহযোগীদের নিয়ে ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন সাজ্জাদ।
দুধর্ষ এই শিবির ক্যাডার ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর কলকাতায় গ্রেপ্তার হন। ওইদিনই বাংলাদেশ পুলিশকে জানায় ইন্টারপোল।
এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছরেও ভারত থেকে আট খুন মামলার আসামিকে দেশে ফেরত আনা যায়নি।
সাজ্জাদ গতবছর দিল্লির তিহার কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, একটি অস্ত্র মামলায় সাজ্জাদের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। আট খুন মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলেও হাইকোর্টে অব্যাহতি পান তিনি।
সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা বিচারাধীন এবং সাতটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

যা ঘটেছিল চট্টগ্রামে:
সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি শহরের আঁকাবাঁকা পথে ছুঁটে চলছে। তার পিছু নিয়েছে নীল রংয়ের অপর একটি মাইক্রোবাস। হঠাৎ পেছনের চলন্ত মাইক্রোবাসের ডান দিকের সাইড দরজা খুলে যায়।
ভারি অস্ত্র হাতে এক যুবক খোলা দরজা দিয়ে মাথা বের করে আছে। একই সময়ে চালকের বাম দিকে বসা আরেক যুবকও জানালা দিয়ে দেহের অর্ধেক বের করে বসেছে। তার হাতেও ভারি অস্ত্র। হঠাৎ তাদের অস্ত্রগুলো হিংস্র হয়ে ওঠে।
সামনে ছুটে চলা মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে সমানে গুলি চলতে থাকে। পেছনের গ্লাস ভেঙে যায়। চাকা ফুটো হয়। সাদা মাইক্রোবাসটি থেমে যায়।
অস্ত্রধারীদের বহন করা নীল মাইক্রোবাসটি পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে ব্যারিকেড দেয়। দ্রুতগতিতে ৩/৪ জন যুবক মাইক্রোবাস থেকে নেমে আসে। প্রত্যেকের হাতেই স্বয়ংক্রিয় ভারি অস্ত্র। তারা সাদা মাইক্রোবাস ঘিরে ফেলে।
ট্রিগারে চাপ দেয়। ম্যাগজিনের গুলি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রিগার থেকে আঙুল সরায় না তারা। সাদা মাইক্রোবাসের ভেতরটা ততক্ষণে রক্তে ভেসে গেছে। একজন আরেকজনের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ফিনকি দিয়ে বের হচ্ছে রক্ত।
একজন দরজা খুলে দৌড়ে পালাবার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। মাত্র ৬ মিনিটেই মাইক্রোবাসের আটটি তাজা প্রাণ হয়ে যায় লাশ।
১৭ বছর আগে চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাটের বহদ্দারবাড়ির সামনে ঠিক এভাবেই ফিল্মি কায়দায় আট খুনের ঘটনা ঘটেছিল। দিনের আলোয় শত শত লোকের সামনে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে অস্ত্রধারীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়।
তৎকালীন সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বহনকারী মাইক্রোবাস এই হামলার শিকার হয়। জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা এই হামলা চালায়। নেতাকর্মীরা এ সময় বাকলিয়ায় ছাত্রলীগের একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন বলে বলা হয়ে থাকে।
ওই ঘটনায় নিহতদের একজনের ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার কালামিয়ার বাজারে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের এক সমাবেশে যাওয়ার পথে ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা ব্রাশ ফায়ার করে।
এতে ছাত্রলীগের ছয় নেতা, তাদের মাইক্রোবাসের চালক ও একজন অটোরিকশার চালক নিহত হন।
নিহতরা হলেন- কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি হাসিবুর রহমান হেলাল, এজিএস রফিকুল ইসলাম সোহাগ, ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহাঙ্গীর হোসেন, বায়েজিদ বোস্তামী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, শেরশাহ কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আবুল কাশেম, জাহিদ হোসেন এরশাদ, মাইক্রোবাস চালক মনু মিয়া এবং অটোরিকশা চালক কাশেম।
ঘটনার আট বছর পর ২০০৮ সালের ২৭ মার্চ মামলাটির রায় দেন চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ একরামুল হক চৌধুরী।
রায়ে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খান, মো. আলমগীর কবির ওরফে বাট্টা আলমগীর, মো. আজম ও মো. সোলায়মানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
এছাড়া তিনজন শিবির ক্যাডার হাবিব খান, এনামুল হক ও আবদুল কাইয়ুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা এখনও পলাতক। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন খান ভারতে জেল খেটে ছাড়া পেয়েছেন। অন্য তিনজন দেশের কারাগারে বন্দি।
পরে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে সাজ্জাদসহ চার আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় দেন।

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া