adv
২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনমনে শঙ্কা, ইসির অভয় – আজ ৭১৭ ইউপিতে ভোট গ্রহণ

7013621eff7d60daa77e638cfceb701c-ডেস্ক রিপোর্ট : স্থানীয় সরকারের সব থেকে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ মঙ্গলবার। সকাল ৮টা থেকে টানা ৪টা পর্যন্ত এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ভোটারদের মাঝে সে ধরনের উতসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার কথা তা লক্ষ করা যাচ্ছে না। ৭ শতাধিক ইউপির মধ্যে অর্ধশতাধিক চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় উতসবের আমেজ ম্লান হয়ে গেছে। এদিকে, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনার প্রেক্ষাপটে জনমনে উতকণ্ঠা ও শঙ্কা বিরাজ করছে। অবশ্য, নির্বাচন কমিশন শেষ সময় পর্যন্ত ভোটারদের অভয় দিয়ে যাচ্ছে। ভোটারদের আহ্বান জানিয়ে কমিশন বলছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আপনারা নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দমতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন।
ছয় ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের রোডম্যাপের প্রথম ধাপে মঙ্গলবার ৭১৭টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। প্রথমদিন ৭২১টি ইউপিতে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন অনিয়ম ও উচ্চ আদালতের রায়ের কারণে শেষমুহূর্তে ৪টির নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। যেকোনও সময় এর সংখ্যা আরও কম-বেশি হতে পারে বলে কমিশন থেকে জানানো হয়েছে। প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে বুধবার ১১টি ও আগামী ২৭ মার্চ আরও ‍দুটি ইউপির ভোট গ্রহণ হবে।

দেশের ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ নির্বাচনে ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। তবে তৃণমূলে জনপ্রিয়তা যাছাইয়ের এ ভোটে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপি’র ধানের শীষে। অবশ্য বিভিন্ন কারণে বিএনপি ইতোমধ্যে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
নির্বাচন কমিশন ভোটকে সামনে রেখে নির্বিঘ্ন পরিবেশের বিষয়ে অভিয় দিলেও পর্যবেক্ষক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করছে। প্রতিপক্ষের উপর হামলা, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, প্রচারে বাধা দেওয়ার ঘটনা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপক প্রবণতা দেখা গেলেও এ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থাও ছিল না ইসির।

ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ ছুটি রয়েছে। কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সামগ্রী নিয়ে নির্বাচনি কর্মকর্তারা সোমবার রাত থেকেই নিজ নিজ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে এ পর্যন্ত ২০৮টি সহিংস ঘটনায় সাত জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া ৫৫টি সাধারণ ডায়েরি ও ১৪৩টি মামলায় ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় সরাসরি কোনও প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়নি বা তাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলাও হয়নি।

প্রথম ধাপের তথ্য

কমিশন ২২ মার্চ ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ ঠিক করে গত ১১ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। প্রথম ধাপে মোট  প্রার্থী ৩৬ হাজার ৪৬৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ৪৩ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত পদে ৭ হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ৭৩৩, বিএনপি ৬১৩ জন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হাজার ২৪৬ জন। ১৪ টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫৪ জন চেয়ারম্যান, ১৭৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৫৪ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। 

 ধাপে ৬ হাজার ৯৮৭টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। প্রথমধাপের মোট ভোট ১ কোটি ১৯ লাক ৪০ হাজার ৭৪১ জন। এতে পুরুষ ভোটার ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ভোটার ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ জন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৭ হাজার ৮৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি ভোটকক্ষে ১ জন করে ৩৮ হাজার ৩৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি ভোটকক্ষে ২ জন করে ৭৬ হাজার ৭২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মোট ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা থাকবেন প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৫ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি।

 

ভোটারদের অভয়, কাঙ্ক্ষিত দফতরের সহযোগিতা না পাওয়ায় হতাশা-

ইউপি নির্বাচনে নিরাপদ পরিবেশের ব্যবস্থার দাবি করে কমিশন ভোটারদের অভয় দিলেও নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিশন ছাড়া অন্যান্য দফতরের কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে।

২১ মার্চ সোমবার এক ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন যেন খারাপ না হয় আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা যাদের মাধ্যমে কাজ করি, বেশিভাগ অন্য দফতরের লোকজনের ওপর নির্ভর করছি। এবার অন্য ডিপার্টমেন্টের লোকদের রিটার্নিং অফিসারও করতে হয়েছে। তাদের আমরা খুব অল্প সময়ের জন্য ট্রেনিং দেই। তাদের ওপর আমাদের তেমন কর্তৃত্বও নেই। সেখান থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা কিংবা, আমরা যে মাপের সেবা চাই তা পাই না। এ জন্য এসব ঘটনা ঘটছে।

 এ সময় তিনি বলেন, কিছু কিছু এলাকায় ডিফিনিটটি খুব খারাপ হচ্ছে; যেখানে সহিংসতা হচ্ছে। উন্নত দেশের তুলনায় নির্বাচনের সহিংসতা আমাদের ও প্রতিবেশী দেশে বেশি।  এটাকে আমরা কমিয়ে আনতে পারছি না। এটা চরিত্রগত বিষয়। এটা দূর করতে সময় লাগবে।

নির্বাচনি সংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরে সিইসি  জানান, এখন নির্বাচন অর্থকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যার ফলে যার গায়ে জোর বেশি তিনিই নিজেকে সবচেয়ে যোগ্যব্যক্তি মনে করেন। এগুলোর সব সমাধান হবে ভোটারদের রায়ে। ভোটাররা ভালো ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবেন। এভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।  

সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে ইসির গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে সিইসি জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সাত জনকে এক মাস করে কারাদণ্ড ও ৬০ জনকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি জানান, শাস্তিমূল ব্যবস্থা হিসেবে ওসি, ইউএনও, নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। অনেকে সতর্ক করা হয়েছে। একজন সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা, একজনকে শোকজ ও এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

 এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা প্রতিটি সদস্যকে বিশেষ নির্দেশ দিচ্ছি – ভোটকেন্দ্রে হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীকে গ্রেফতার করতে হবে। ভোটারদের জন্য নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ভোটের দিন যাতে বিআইনী কাজ না ঘটে তার জন্য সরবশক্তি প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচনে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত ও নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রায়োগ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি ভোটার যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া