ভারতের পরাজয়- যুব বিশ্বকাপে নতুন রাজা ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জহির ভূইয়া : মিরপুর স্টেডিয়ামের পশ্চিম দিকে সূর্য্য হেলে গেছে। দিনের আলো শেষ পর্যায়ে, অন্ধকার আসছে। কিন্তু সেই অন্ধকার গায়ে স্পর্শ করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনু-১৯ ক্রিকেট দলের সদস্যদের। সেই অন্ধকারটা যেন আরও বেশি করে আছঁড়ে পড়েছে ভারতীয় অনু-১৯ ক্রিকেট দলের ড্রেসিং রুমে। ৫ উইকেটে হেরে যাবার কারনেই ভারতীয় ড্রেসিং রুমে এতো অন্ধকারময়। উল্টো চিত্র অন্য ড্রেসিং রুমে। আলোর ফুলকি ছড়াচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ড্রেসিং রুমে। মাঠে তখন দুই দলের সদস্যরা হাত মেলাচ্ছে। এই হাত মেলানোর মধ্যে দিয়ে শেষ হল আইসিসির ১১তম অনু-১৯ বিশ্বকাপের আসর।
ক্রিকেট যে অনিশ্চিত খেলা সেটা আজ মিরপুরের উইকেটে ভারতীয় অনু-১৯ ক্রিকেট দল প্রমান করেছে। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১১তম অনু-১৯ বিশ্বকাপ আসরের নতুন চ্যাম্পিয়নের নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ বল অক্ষত রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনু-১৯ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ আসরে নতুন রাজা বনে গেল। ভারতকে ৪৫.১ ওভারের বেশি ব্যাট করতে দেয়নি।
গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিন আফ্রিকা এবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ। প্রচন্ড দাপটের সঙ্গে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ভারত অনু-১৯ ক্রিকেট দলকে এক কথায় উড়িয়েই দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই মিরপুরেই বাংলাদেশ অনু-১৯ ক্রিকেট দলকে সেমিতে ৩ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ভারত সেমিতে শ্রীলঙ্কান অনু-১৯ দলকে ৯৭ রানে হারিয়ে ফাইনালে এসেছিল।
৪৫.১ ওভারেই ১৪৫ রানে ভারতকে অলআউট করে ক্রিকেট যে অনিশ্চিত খেলা সেটা আবারও প্রমাণ করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনু-১৯ দল। ভারতের ১৪৬ রানের টার্গেট দেবার পর হিসেব অনুয়াযী ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনু-১৯ ক্রিকেট দল ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন এটা আনুষ্ঠানকি ঘোষণা বাকী ছিল মাত্র। কারন ১৪৬ রান সংগ্রহ করা কঠিন কোন কাজ নয় ওয়স্টে ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইনের জন্য। সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রমান করেছে ৪৯.৩ ওভারে। তবে মিডল অর্ডার কিছুটা চাপে ফেলে দিয়েছিল। এক সময় মনে হয়েছিল ম্যাচটা বুঝি ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাত ছাড়া করবে ২০০৪ সালের ফাইনালের মতো। কিন্ত ৫ম জুটি সেটা হতে দেয়নি।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে যে দলটি বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হেরেছিল। সে দলটি কি-না অনু-১৯ বিশ্বকাপে এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন? তাও আবার শিরোপার দাবিদার, যারা ৩ বার অনু-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছে? সেই ভারতকে রীতমতো নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল? কি ব্যাটিং, কি বোলিং বা ফিল্ডিং কোন বিভাগেই দাঁড়াতে পারেনি ভারত।
১৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছোটদের দলের দুই ওপেনার চাপে ফেলে দিলেন। ওপেনার পোপ ৩ রান করে দলীয় ৫ রানে ক্যাচ দিলেন। তবে অপর ওপেনার টিভেন ১৫ রান করার পরই ফেরত গেলেন। দলের রান ৬৭ পর্যন্ত আর কোন সমস্যা তৈরি করতে পারেনি ভারতের বোলিং বিভাগ। ৬৭ রানে মিডল অর্ডারের সিমরন ২৩ রানে ক্যাচ দিলেন। আর স্পিঙ্গার ৩ রানে আউট হলে স্কোর ৪ উইকেটে ২৬.১ ওভারে ৭১ রানে পৌচ্ছায়। কিছু হলেও ম্যাচে ফিরে ছিল ভারত। সেটা আরও বেশি মনে হল ৫ ব্যাটসম্যান গোলিও ৩ রানে ফেরত গেলে। ৮০ রানে ৫ উইকেট! শেষ দিকে ৪ বলে ১ রানের দরকার ছিল। হাতে ছিল অক্ষত ৫টি উইকেট। ৫ উইকেট জুটিতে ক্যার্টি আর পাউল মিলে যোগ করলেন ৬৯ রান। তাতে ৩ বল অক্ষত রেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনু-১৯ বিশ্বকাপের নতুন রাজা বনে যায়।
ফাইনাল ম্যাচের আগে বলা হয়ছিল খেলাটা হবে ভারতের গভীর ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে ক্যারিবীয়দের পেস বোলারদের। সেখানে সফল জোসেফ, হোল্ডার আর জন। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারতরে দুজন ব্যাটসম্যান ছাড়া আর কেউ কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। দুই অঙ্করে কোটা পার করতে পারেনি কেউ। বোলারদের সামনে কেউ দাপট দেখাতে পারেনি। যে দলটি সবগুলো ম্যাচে ব্যাটে দেখিয়েছে দাপট! সে দলটার স্কোর থামে ১৪৫ রানে! মিডল অর্ডারে ফারাজ খানরে ৫১, মাহিপালরে ১৯ ও শেষে দিকে রাহুলের ২১ রানে ভারতের ইনিংস থামে ১৪৫ রানে। সর্বোচ্চ ৫১ রান আসে সারফারাজের ব্যাট থেকে। অতিরিক্ত থেকেইে আসে ২৩টি রান।