মেয়ের লাশ নিয়ে যে কাণ্ডটি ঘটালেন ‘মা’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সকাল থেকেই দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ প্রতিবেশীরা। বেলা বাড়ার সাথে দুর্গন্ধটাও তীব্র হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গন্ধের উতস খুঁজতে নেমেছেন আশ-পাশের বাসিন্দারা। তারা বুঝতে পারেন, পাশের বন্ধ ফ্ল্যাটেই দুর্গন্ধ সৃষ্টির মতো কিছু একটা রয়েছে।
বন্ধ ফ্ল্যাটের ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়েই বেড়িয়ে আসছে অসহ্য দুর্গন্ধ। সন্দেহের খবর দেয়া হয় পুলিশকে। এর পর জানা গেল দুর্গন্ধের কারণ।
পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের দরজা খুললে দেখা যায়, ঘরের মেঝেতে পড়ে পচাগলা এক মহিলার দেহ। আর তাঁর সামনে বসে হাত জোড় করে কেঁদে চলেছেন এক বৃদ্ধা। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না তিনি।
শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে ভারতের টালিগঞ্জের নেতাজিনগর এলাকায়।
পুলিশ জানায়, মৃতার নাম মাম্পি নাথ (৪৩)। মায়ের নাম জলি নাথ। মা এবং মেয়ে নেতাজিনগরের এক তিনতলা আবাসনের দোতলায় থাকতেন।
প্রতিবেশীরা জানান, জলিকে মাঝেমধ্যে রাস্তায় দেখা গেলেও পাঁচ বছরে কোনো দিন তার মেয়ে মাম্পিকে দেখা যায়নি। তদন্তকারীদের অনুমান, অন্তত দিন সাতেক আগেই মৃত্যু হয়েছে মাম্পির।
স্থানীয়রা আরও জানান, অন্তত ১০ বছর আগে নেতাজিনগরে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করেন জলিরা। মা-মেয়ে নিজেদের মতোই থাকতেন। পাড়ায় বা নিজেদের আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গেও মিশতেন না। তার স্বামীকেও কোনো দিন দেখা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আনন্দরূপ ভদ্র বলেন, ‘‘গত পাঁচ দিন ধরে এক বারের জন্যও জলি ঘর থেকে বেরোননি। পুলিশ আসার পরে দরজা খোলেন।’’
মাস ছয়েক আগে জলিদের ঘরে আগুন লেগেছিল। তখন পুলিশ ও দমকলকর্মীরা এসে একই ভাবে দরজা খুলেছিলেন বলে জানান বাসিন্দারা।
জুনে রবিনসন স্ট্রিটের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল দেবযানী দে নামে এক মহিলার কঙ্কাল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দিদির মৃত্যু সংবাদ কাউকে না দিয়ে ঘরের মধ্যে ছ’মাস ধরে রেখে দিয়েছিলেন তার ভাই পার্থ দে। মাস খানেক আগে নৈহাটিতে বড় দাদার মৃতদেহ সৎকার না করে দিন সাতেক বাড়িতে রেখে দিয়েছিলেন ভাই আর বোন।
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক পরিবারে মৃত স্বামীর দেহ পাঁচ মাস ধরে আগলে রেখে দিয়েছিলেন স্ত্রী। পরে পুলিশ সেই দেহ উদ্ধার করে।
নেতাজিনগরের ঘটনার তদন্তকারীরা জানান, ঘরের মেঝেতে ছিল মাম্পির দেহ। তার একটি চোখ বেড়িয়ে ছিল। দেহ ফুলে গিয়েছিল। দেহের চারপাশে মাছি আর পোকা কিলবিল করছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, মা-মেয়ে দু’জনেই মানসিক ভারসাম্যহীন।
আবাসনের বাসিন্দা রেখা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে এক বাড়িতে আছি। অথচ মা-মেয়ের সঙ্গে এক দিনও কথা হয়নি। সব সময়ে ঘরের দরজা বন্ধ থাকত।’’
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের সম্পর্ককে বলা হয় ‘সিমবায়োটিক রিলেশন।’ মা এই ক্ষেত্রে সন্তানের থেকে নিজের অস্তিত্বকে আলাদা করে ভাবতে পারেন না। দু’জনের মধ্যে সর্ম্পকের ক্ষেত্রে পৃথক অস্তিত্ব গড়ে না ওঠার জন্যই এই ধরনের সমস্যা হয়।’’ সূত্র আনন্দবাজার