adv
১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরমাণুবিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Wajed_Mia1431134969ডেস্ক রিপোর্ট : রংপুরের পিছিয়ে পড়া এক গ্রাম পীরগঞ্জের ফতেপুরে জন্ম, নাম তার সুধা মিয়া। এই সাদাসিধে ছেলেটিই বড় হয়ে দেশের অন্যতম একজন আণবিক বিজ্ঞানী হিসেবে নাম কুড়ালো। আরো অবাক করা ব্যাপার, সে বড় হয়ে হলো জাতির জনকের জামাতা। সবই হলো তার লেখাপড়ার গুণে, মেধার গুণে, অন্য কোনো যোগ্যতায় নয়।
 
এ দেশের এই মেধাবী বিজ্ঞানীর নাম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী। বাংলাদেশের আণবিক পাওয়ার প্লান্টের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তার বিজ্ঞান সাধনার উতকর্ষের জন্য তিনি যুগের পর যুগ বাংলাদেশের ইতিহাসে নক্ষত্র হয়ে জ্বলবেন। যার অপরিসীম জ্ঞান ও আন্তরিকতা আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উতকর্ষে বিশেষ অবদান রেখেছে। তিনি পরমাণু বিজ্ঞানকে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। আজ ৯ মে এই মহান বিজ্ঞানীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।
 
পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান স্বপ্নবান এই বিজ্ঞানী নির্লোভ ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে ক্ষমতার ভেতর থেকেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহারের সামান্যতম সুযোগ নেননি, যা তার জন্য খুব সহজ ছিল। তিনি আপন অবস্থানে থেকেই কাজ করে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের রূপপুরে একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা, দেশের বিজ্ঞানীদের পেশাগত কাজের উতকর্ষ বৃদ্ধির জন্য একটি বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ করা। দেশের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রসারে তার অবদান অবিস্মরণীয়।
 
রংপুরে নিজ গ্রামেই বেড়ে ওঠা তার। তারপরেও নিভৃতচারী মেধাবী এ মানুষটি নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন শিক্ষার মাধ্যমে। সহজ, সরল, মেধাবী, সদা সত্যভাষী এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় অনন্য এই মানুষটিকে কন্যা শেখ হাসিনার স্বামী হিসেবে পছন্দ করেন বঙ্গবন্ধু। তাদের বিয়ে হয় ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর। ওয়াজেদ মিয়া-শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আইটির উন্নয়নে এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই স্বপরিচয়ে দোদীপ্যমান।
 
তার প্রতিভার অনেক দিকই আমাদের অজানা। তিনি শুধু একজন মেধাবী ছাত্র বা পরমাণুবিজ্ঞানীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন নির্লোভ, নিভৃতচারী, নীতিবান, নিরহংকার, নির্ভীক, স্পষ্টবাদী, দৃঢ়চেতা, দেশপ্রেমিক, আদর্শবান, সৎ, সহজ-সরল, বিনয়ী, চরিত্রবান, যুক্তিবাদী, অজাতশত্রু  ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন আদর্শ মানুষ।
 
১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে অ্যাসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। এই সুবাদে তিনি ১৯৬৯-৭৩ ও ১৯৮৩ সালে ওই গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিবার ৬ মাস ধরে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।
 
১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের ‘আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে’ আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।
 
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে তিনি পরপর দুবার বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি পরপর তিনবার ওই বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চার বছর তিনি বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৯৭ এবং ১৯৮৯ সালে দুই বছর মেয়াদের জন্য ওই বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। আর এসব পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন শুধু তার যোগ্যতার নিরিখেই।
 
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পরপর দুবার বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি পরপর দুবার দুই বছর মেয়াদকালের জন্য ওই বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯১-১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘেরও সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার তিনি ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানজীবী সমিতি’র সভাপতি নির্বাচিত হন। এসব তালিকাক্রম থেকেই অনুমেয় যে তিনি কতখানি খাঁটি বিজ্ঞানী ছিলেন।
 
আজ বাস্তবায়নের পথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। বলা যায়, এটা অনেক বড় এক স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পূরণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। সফল হবে বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার আমরণ প্রচেষ্টা এবং সুফল ভোগ করবে সারা দেশের মানুষ।’ যথার্থই বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
ওয়াজেদ মিয়া সাতটি পাঠ্যবই লিখেছিলেন, এর মধ্যে ছয়টিই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। মৃত্যুর আগে সপ্তম বইটির সম্পাদনার কাজে ন্যস্ত ছিলেন তিনি।আর-বি

 

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া