adv
২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার শান্তি মিশনে র‌্যাব

download (28)ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশ এবার শান্তিরক্ষা মিশনে র‌্যাব সদস্যদের পাঠানোর বিষয়ে পরিকল্পনা করছে বলে এধরনের উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস। রিপোর্টটি এমন সময় প্রকাশ করা হয়েছে যখন বাংলাদেশ সফর করছেন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অপারেশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হার্ব ল্যাডসউস। বৃহস্পতিবার শ্রীলংকা ভিত্তিক দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার অনলাইন সংষ্করণে খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, চট্রগ্রাম পাহাড়ে কর্মরত সেনাসদস্য ও র‌্যাব সদস্যদের নতুন করে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অথচ ডেথ স্কোয়াড নামে খ্যাত র‌্যাবের বিরুদ্ধে অসংখ্যা মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বহির্র্র্ভূতহত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। মূলত সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রাধান্য দিয়ে ২০০৪ সালে র‌্যাব গঠন করা হয়। ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৫টি বিচার বহির্ভূতহত্যাকাণ্ড, ৪৪৬টি জোরপূর্বক গ্রেপ্তার, ৩৭৪টি নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি চট্রগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলে জুম্মা সম্প্রদায়ের ১ হাজার ৭০টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে জায়গা দখল করার জন্য ২৮৫টি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে যে ২০০৯ সালের পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৭০ জন সন্দেহভাজন বিডিআর সদস্যকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। এছাড়া র‌্যাবের ২০৮ কর্মকর্তাদের মধ্যে ৮৩ জন যে সেনাসদস্য রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৭৬টি ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূতহত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। বিচার বহির্ভূতহত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সদস্যদের ইতিমধ্যে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
র‌্যাবের বিচার বহির্ভূতহত্যকাণ্ডের বিষয়ে এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস পরিচালক সুহাশ চাকমা বলেন, ‘র‌্যাব সদস্যরা ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূতহত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ২০০৪ সালে বাহিনীটি গঠন করার পর থেকে অপরাধী ও সন্ত্রাসী চক্র নির্মূল করার জন্য প্রতিবার ক্রসফায়ারের মত ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে’।
শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার অনেক সুবিধা রয়েছে বিশেষ করে আর্থিক সুবিধা। শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করলে প্রতিটি কর্মকর্তা মাসিক সর্বোচ্চ ২ হাজার ২শ’ মার্কিন ডলার আয় করতে পারেন। যেখানে দেশে কাজ করলে মাত্র ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। এছাড়া একজন সৈনিক মাত্র ৭ হাজার ৭১৭ টাকা দেশিও কাজে এবং শান্তি রক্ষা মিশনে থাকলে মাসিক ১ হাজার ১শ’ ডলার আয় করতে পারেন। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি বাহিনীর মধ্যে ৯৩ ভাগ সেনাবাহিনীর সদস্য থাকেন বাকি ৭ ভাগের মধ্যে পুলিশ, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। তবে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর কোনো সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদান করতে পারে না।
শান্তিরক্ষা মিশনে বিডিআর সদস্যদের যেতে দিতে রাজি না হওয়ার জের ধরে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারি রাজধানীর পিলখানায় দরবার হলে বিদ্রোহের নামে গণহত্যায় মেতে ওঠে বিডিআর সদস্যরা। বিদ্রোহের জের ধরে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা।
শান্তিরক্ষা মিশনে বিডিআর সদস্যদের প্রেরণ করার বিষয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবনার বিষয়টির কোনো বিবেচনা না করে ততকালীন বাংলাদেশ সরকার দশ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে বিদেশি মিশনে সীমান্ত বাহিনী পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ সরকার।
মিঃ চাকমা তার রিপোর্টে বলছেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) যেটি বিডিআর বর্তমান বিজিবির সমকক্ষ। অথচ ভারত সরকার শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিএসএফ সদস্যদেরও পাঠাচ্ছে। এরই মধ্যে বিএসএফ সদস্যরা নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, মোজাম্বিক, এ্যাঙ্গোলা, বসনিয়া ও হার্জোগোভিনা এবং হাইতিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ পিলখানার মত ট্রাজিক ঘটনার পরও বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর একটি নির্দিষ্ট অংশ শান্তিরক্ষা মিশনে সীমান্ত বাহিনীর সদস্যদের যেতে দিচ্ছে না।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সর্বসময়ের জন্য মাত্র ৭ ভাগ সেনাসদস্য মোতায়েন করা থাকে। বাকি চাহিদার ভিত্তিতে পাঠানো হয় এবং মোতায়েন করা হয়। তাই বাংলাদেশে অদৃশ্য সেনা প্রভাব রোধ করার জন্য জাতিসংঘ নতুন করে শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য সেনা সদস্যের বিষয়ে আলোচনা করছে। সেনাবাহিনীতে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শান্তিরক্ষা মিশনের বিষয়ে জাতিসংঘ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য ২০১১-১২ সালে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ১১ ভাগ প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ সরকার। শান্তিরক্ষা মিশনে সদস্যদের কাজের সুবিধার জন্য চীন থেকে সাম্প্রতিক বছরে ৪৪টি যুদ্ধ ব্যবহƒত ট্যাংক, তিনটি আর্মড রিকভারি যান এবং ২টি নতুন হেলিকপ্টার কেনা হয়েছে।
যেহেতু শান্তিরক্ষা মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাই এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এর পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে শান্তিরক্ষা মিশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সদস্য নিয়োগ সংক্রান্ত ২০১২ সালের নীতি অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে করে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার সুযোগ না পান।

 

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া