রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুর্নীতির দায় জনগণের কাঁধে
ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অদক্ষতা দুর্নীতির করণে মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ৪ হাজার ১০০ কোটি দিচ্ছে সরকার।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ও আর্থিক বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায় বুধবার ব্যাংকিং ও আর্থিক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমলেন্দু মুখার্জী এর সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ও অর্থমন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ৪১০০ কোটি টাকার মধ্যে সোনালী ব্যাংক পাবে ২ হাজার কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংক পাবে ১১০০ কোটি টাকা। জনতা ৮০০ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংক পাবে ২০০ কোটি টাকা।
সূত্র আরো জানায়, টাকা দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখন ব্যাংগুলো আবেদন করলেই অর্থমন্ত্রণালয় টাকা ছাড় দেবে।
এর আগে প্রথম দফায় না পারলেও দ্বিতীয় দফায় বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মূলধন ঘাটতি পূরণের প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা জমা দেয় এ খাতের ৪ ব্যাংক। কর্মপরিকল্পনায় সোনালী ব্যাংক তাদের মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রায় ৪০০০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করে। অগ্রণী ব্যাংক ২২০০ কোটি, জনতা ব্যাংক ১৬০০ কোটি এবং রূপালী ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করে।
তবে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সবগুলোর ব্যাংকের চাহিদার অর্ধেক অর্থ দিতে সম্মত হয় বৈঠকে অংশ গ্রহণকারী কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠিয়েছে। তবে রূপালী ব্যাংক এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় গত বৃহস্পতিবার।
গত ৬ নভেম্বরের মধ্যে এই চার ব্যাংককে মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ের পূর্ণাঙ্গ ও প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠাতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকগুলো। এরপর গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিপূর্ণ ব্যবসায়ী পরিকল্পনা চেয়ে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে চিঠি পাঠায় ব্যাংকগুলোর এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের এ চার ব্যাংক মূলধন ঘাটতি মেটানোর জন্য ‘বিজনেস প্ল্যান’ জমা দিয়েছে তা মোটামুটি সন্তোষজনক। কর্মপরিকল্পনায় সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের পুরো তথ্যসহ শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে নগদ আদায়, বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোর উদ্যোগ উল্লেখ করা রয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা (এমওইউ) স্মারক প্রতিপালন সম্পর্কিত তথ্য, খেলাপি ঋণের সর্বশেষ অবস্থা, অটোমেশন সম্পর্কিত কার্যক্রম, তারল্যঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়নের সর্বশেষ অবস্থা ছাড়াও বিচারাধীন মামলা, অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিসহ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় নেওয়া উদ্যোগগুলোও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবহিত করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘সরকারের ব্যাংক তাই এ ব্যাংকগুলোর দেখভাল করার দায়িত্ব সরকারের। ফলে সরকারের অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক।’
দেশের প্রতিথযশা অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন ব্যাংগুলো অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাবেই মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো দির্দেশনা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘শুধু মূলধন ঘটতির টাকা দেয়ার সময়ই নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে এগুলো দেখভাল করে আসছে।’
মূলধন ঘাটতি পূরণে কার কত টাকা লাগবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পাঠানোর জন্য চার ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ব্যাংকগুলো তা জমাও দিয়েছে।
গত রোববার এ কর্মপরিকল্পনা প্রতিবেদন আকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন পরবর্তী কাজ অর্থমন্ত্রণয়ের বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংককের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ১৪ কোটি টাকা। এ সময় ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। গত সেপ্টেম্বরে চার বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয়েছে ২৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা বা ২৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য, আর্থিক কেলেঙ্কারি আর নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কারনে মূলধন ঘাটতি হওয়ায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা মূলধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এই তহবিলের ৯০০ কোট টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়ে হয়েছে শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের। আর বাকি ৪১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক। তবে বরাদ্দ দেবার পর জনগণের করের টাকায় রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকের অদক্ষতা ও দুর্নীতির দায় মেটানোর কঠোর সমালোচনা করেন অর্থনীতিবিদরা।