পুলিশের বেপরোয়া গ্রেফতার বাণিজ্য – নিশ্চুপ মানবাধিকার সংগঠনগুলো
ডেস্ক রিপোর্ট : ৫ জানুয়ারির পর থেকে দেশে বেড়েছে বেপরোয়া গ্রেফতার বাণিজ্য। আর এই গ্রেফতার বাণিজ্যে রাঘোব বোয়ালরাতো ধরা পড়ছেই না, হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশ, র্যাব, যৌথবাহিনী ও আওয়ামী লীগের গুলিতে নিহত হয়েছে ৩৪ জন। প্রতি নিয়তই অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা গ্রেফতার হচ্ছে। অভিযোগ আছে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীরাও বাদ পড়ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর এই অবৈধ গ্রেফতার তৎপরতা থেকে। কিন্তু এসব পরিস্থিতির সব ঘটনা এড়িয়ে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
গত ২৬ জানুয়ারি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সৈকত কবীরকে তার বাসস্থান থেকে গ্রেফতার করে কাফরুল থানা পুলিশ। পরে তাকে জামায়াত-শিবির কর্মী পরিচয়ে নাশকতা মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়।
কিছু দিন আগের কথা। রাজধানীর গাবতলী এলাকায় গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে বাস থেকে মধ্যরাতে নামেন একজন ব্যবসায়ি। কলাবাগান নিজ বাড়িতে ফেরার উদ্দেশ্যে একটি সিএনজি ভাড়া করে রওনা দিতেই টেকনিক্যাল মোড়ে পুলিশ চেকপোস্টে তাকে দাড় করানো হয়। এসময় পুলিশ তাকে তলপিতলপা তল্লাশি করে কোন কিছু না পেয়ে এক পর্যায়ে ভিত্তিহীন এবং উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতে থাকে। ঘটনার এক পর্যায়ে আরো দুজন পুলিশ সদস্য এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে আসে। এসময় তাকে তল্লাশি করে বেশ কিছু মাদক দ্রব্য জব্দ করার নাটক করে। এই ঘটনার সঙ্গে ওই ব্যবসায়িকে জড়িয়ে দেবার হুমকি দিলে সেই রাতেই ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অবশেষে মুক্তি পান ঐ ব্যবসায়ি।
অভিযোগ উঠেছে পুলিশ নিরীহ মানুষের উপর গ্রেফতার ততপরতা চালাচ্ছে। আর বেশিরভাগ এই অনৈতিক কার্যক্রম রাতের বেলা করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নাশকতা ঠেকানোর নামে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ। মধ্যরাতে পুলিশকে খুশি করতে পারলেই মিলছে মুক্তি। আর এর বিপরীত হলেই সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারা এবং ডিএমপির ১০০ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদ্যালতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আটককৃতরা জামাত-শিবিরের সদস্য অভিযোগ এনে গ্রেফতার রাখা হচ্ছে।
আমাদের সময় ডটকমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আটককৃত অনেকেই পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে থানা হাজত থেকে মুক্তি পেয়েছে।
একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া প্রশ্নের জবাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, শুধু যে জামায়াত-শিবির কর্মী হলেই তাকে গেফতার করা হবে এটা কোন গ্রহণযোগ্য যুক্তি হতে পারে না। এটা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, এভাবে যদি নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হয় তাহলে সরকারের আসল উদ্দেশ্য সফল হবে না।
সিনিয়র সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, নাশকতা শুধু জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাই যে করছে তা ঠিক নয়। অন্যরাও করছে এবং করবে।