adv
২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা বদলে জামায়াত-বিএনপি গোপন সমঝোতা!

আনন্দবাজার পত্রিকা : বামফ্রন্টকে হটিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার পালাবদলের নেপথ্যে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির গোপন সমঝোতা হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
ওই ভোটে তৃণমূল এবং কংগ্রেস জোটের সঙ্গে এ সমঝোতা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিংহ।
তার মতে, জামায়াতের সহায়তা নিয়েই রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ৭৫টি বিধানসভা-আসনের অধিকাংশে জিতেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। এই সমঝোতার জোরেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে ঢাকা সফর বাতিল করে মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তি রুখে দিয়েছিলেন কিনা, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির এই কেন্দ্রীয় নেতা।
বুধবার পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী ‘দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা’ শীর্ষখবর হিসেবে প্রকাশ করেছে এ খবরটি।
মঙ্গলবার কলকাতায় সিদ্ধার্থ নাথ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাহায্য নিয়েই সীমান্ত এলাকার ৭৫টি আসনের অধিকাংশে জিতেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। তৃণমূল জিতেছিল ৩২টি এবং কংগ্রেস ১৩টিতে।
সিদ্ধার্থ নাথের দাবি, নির্বাচনে সাহায্য পাওয়ার বিনিময়ে তৃণমূল জামায়াত নেতৃত্বকে আশ্বাস দিয়েছিল, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যূত করতে তারা যথাসাধ্য সাহায্য করবে।
সিদ্ধার্থ নাথের প্রশ্ন, এই সমঝোতার ফলেই কি মনমোহন সিংহের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছিলেন মমতা?
২০১১-র ওই সফরে দু’দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে তা হতে পারেনি। সিদ্ধার্থ নাথ বলেন, ‘বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের রিপোর্ট দু’পক্ষের এই সমঝোতার কথাই বলছে। ও দেশের সংবাদপত্রেই এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।‘

তার উত্থাপিত এ অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে তিনি দুঃখপ্রকাশ করবেন বলেও জানান বিজেপির ওই নেতা। তবে সিদ্ধার্থ নাথের অভিযোগকে ‘কাল্পনিক’ আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
তিনি এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, কলকাতায় বসে সিদ্ধার্থ নাথবাবু হালে পানি পাননি। এখন চলে গেছেন সীমান্তে। পাগলে কিনা বলে! জামায়াতের বন্ধু কারা, তা বোঝা যাচ্ছে!
তার অভিযোগ, যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বলার এবং তৎপর হওয়ার কথা, যে তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকার কথা, তা একজন নেতার কাছে থাকে কীভাবে? সন্দেহ হয়, রাজনাথ সিংহ কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেই! তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, যে সময়ের কথা উনি (সিদ্ধার্থ) বলছেন, তখন তৃণমূল ক্ষমতায় ছিল না! কংগ্রেসও সিদ্ধার্থ নাথের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, বিজেপি যা খুশি তাই-ই বলছে! বিধানসভা নির্বাচনে ভোটটা কি বাংলাদেশের মানুষ এসে দিয়ে গিয়েছিল? এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিজেপি যেসব অভিযোগ এনেছে, তা ভারতের ঘরোয়া রাজনীতির বিষয়।
তিনি এ বিষয়ে আনন্দবাজারকে বলেন, তবে রাজনৈতিক স্বার্থে মৌলবাদী ও জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেওয়ার ফল যে কী ধ্বংসাত্মক হতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ তা ঠেকে শিখেছেন। তিনি বলেন, আমরা চাই, বিশ্বের কোনো দেশ যেন জঙ্গিদের প্রশ্রয় না দেয়।
তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, মৌলবাদীদের সাহায্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে আজ তিনি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছেন। তবে ভারতের ঘরোয়া বিষয় নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
আনন্দবাজার জানায়, সারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসালমীর সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজসের অভিযোগ উঠে এসেছে। তৃণমূলের এক সাংসদের বিরুদ্ধে সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার করে জামায়াতের জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আবার খাগড়াগড়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মদতেই বাংলাদেশে সন্ত্রাস চালানোর জন্য বিস্ফোরক তৈরি হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এ সব অভিযোগের সত্যতা এখন খতিয়ে দেখছে এনআইএ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকেও নানা তথ্য পাচ্ছে তারা।
এদিকে, সিদ্ধার্থ নাথ খাগড়াগড়ের বাইরেও তৃণমূলের মদতে জঙ্গি কাজকর্ম চলছে বলে অভিযোগ করেছেন। ২০১২ সালের এপ্রিলে কলকাতার মেটিয়াবুরুজের বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, মেটিয়াবুরুজে যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়, সেখানে শাকিল আহমেদ থাকতো। এই শাকিলই খাগড়াগড় বিস্ফোরণে মারা গেছে। মেটিয়াবুরুজের সেই বিস্ফোরণের সঠিক তদন্ত হলে, সে দিনই শাকিলের ধরা পড়ার কথা। খাগড়াগড়ের ঘটনা তা হলে এড়ানো যেতো।

তবে মেটিয়াবুরুজের ঘটনার তদন্ত না-হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করছে পুলিশ। জঙ্গি সংস্রবের কথা আঁচ করে তদন্তে নামে এসটিএফ-ও (স্পেশাল টাস্কফোর্স)। তিন মাসের মাথায় সিমি-র (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া) প্রাক্তন নেতা হারুন রশিদ আটক হয়।
তারও মাসখানেক পর শিয়ালদহের একটি হোটেল থেকে হারুনের মজুদ করা বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। এসটিএফের এক অফিসার বলেন, মেটিয়াবুরুজ বিস্ফোরণের তদন্ত ঠিকভাবে না হলে হারুন তো আটকই হতো না। তিনি জানান, এটা ঠিক যে, তখন তারা শাকিলের নাম জানতে পারেনি।
কলকাতার আরো একটি পুরনো অপরাধের প্রসঙ্গও এ দিন উত্থাপন করেছেন সিদ্ধার্থ নাথ। গার্ডেনরিচে ২০১৩-র ১১ ফেব্রুয়ারি বোমা বানাতে গিয়ে আহত হন ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের ছেলে অভিজিৎ ও তার দুই সঙ্গী। লালবাজারের এক পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেন, শাসক দলের কয়েক জনের নাম ওই ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় তদন্ত সেভাবে করা হয়নি।

সোমবার সল্টলেকে এনআইএ দফতরের সামনে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটিকেও কলকাতায় জঙ্গি তৎপরতার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়েছেন সিদ্ধার্থ নাথ। তার কথায়, জঙ্গিরা বোঝাতে চেয়েছে, কলকাতাতেও তারা রয়েছে। অতএব গোয়েন্দারা সাবধান! খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকেই বিজেপি নেতৃত্ব এনআইএ তদন্ত চাইলেও মূল অভিযুক্ত সাজিদকে রাজ্য পুলিশই গ্রেফতার করেছে। তবে সিদ্ধার্থ নাথের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের তথ্য নিয়েই রাজ্য পুলিশ সাজিদকে ধরেছে। সুতরাং, এটা তাদের একার কৃতিত্ব হতে পারে না।
এই প্রসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, তাদের পুলিশের যোগ্যতা আছে। এনআইএ-ও সার্টিফিকেট দিয়েছে। এমনকী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এ রাজ্যে এসে প্রকাশ্যে বলেছেন, বর্ধমান ঘটনার তদন্তে তারা সন্তুষ্ট।

 

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া