মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মায়ের কাছেই থাকবে দুই জাপানি শিশু, আপিল বিভাগের রায়
ডেস্ক রিপাের্ট : ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে দুই জাপানি শিশুর জিম্মার ব্যাপারে বিরোধকে কেন্দ্র করে করা মামলাটি ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রবিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদেশে আরও বলা হয়, এই সময়ে নাকানো এরিকো শিশুদের নিয়ে দেশত্যাগ করতে পারবেন না। বাবা ইমরান শরীফ সুবিধাজনক সময়ে শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
আদালতে নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
এর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা এরিকো নাকানোর লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) ওপর ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানি হয়। শুনানি শেষে এ বিষয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য ঠিক করেন আদালত।
গত ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগ দুই মেয়েকে তাদের মায়ের সঙ্গে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার আদেশ দিয়েছিলেন। তবে মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যে কোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফের সঙ্গে ২০০৮ সালের জুলাইয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো।
তাদের ১১, ১০ ও ৭ বছর বয়সী তিনটি কন্যাসন্তান পড়ালেখা করে জাপানের টোকিওর স্থানীয় একটি স্কুলে।
গতবছরের ১৮ জানুয়ারি ইমরান শরীফের সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের জন্য জাপানের একটি আদালতে মামলা করেন নাকানো এরিকো। পরে একইবছরের ২১ জানুয়ারি বড় মেয়েকে নিজের হেফাজতে নিতে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ইমরান শরীফ আবেদন করলে এরিকোর অসম্মতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ সে আবেদন নাকচ করে দেয়। পরে বড় দুই মেয়েকে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান ইমরান শরীফ। এরপর দুই সন্তানের পাসপোর্ট হস্তান্তর করতে ২৫ জানুয়ারি আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করলে নাকানো এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি টোকিওর একটি পারিবারিক আদালতে সন্তানদের নিজের জিম্মায় নিতে মামলা করেন নাকানো এরিকো। আদালত তার আদেশে শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে দেখাসাক্ষাতের আদেশ দেয়।
গতবছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ইমরান শরীফ সন্তানদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর হলে ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট পেয়ে বড় দুই মেয়েকে নিয়ে চারদিন পর বাংলাদেশে চলে আসেন শরীফ।
ওই বছরের ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এক আদেশে দুই মেয়েকে নাকানো এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেয়। এরপর গত ১৮ জুলাই নাকানো এরিকো বাংলাদেশে এসে মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ইমরান শরীফের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন। এরপরই হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন নাকানো এরিকো।