স্মারক নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভবন
ডেস্ক রিপাের্ট : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজস্ব ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে ভেতরের সাজসজ্জার কাজ। যুদ্ধদিনের স্মৃতিস্মারক ধারণ করে প্রস্তুত হচ্ছে সবাইকে স্বাগত জানাতে। আগামী বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে।
বর্তমানে রাজধানীর ৫ সেগুনবাগিচায় ভাড়া ভবনে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উদ্বোধন করবেন। আমাদের হাতে ১৬ হাজারের মতো ডকুমেন্ট আছে। কিন্তু জায়গার অভাবে সব প্রদর্শন করতে পারছি না। নতুন ভবনে গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না।’
রফিকুল ইসলাম জানান, যারা ভবন নির্মাণে সহায়তা করেছে তাদের নাম দ্বিতীয় তলায় লেখা আছে। যারা ১০ হাজার টাকাও দিয়েছেন তাদের নাম লেখা রয়েছে একটি স্মারক ইটে।
আগারগাঁওয়ে সমবায় অধিদপ্তরের পেছনে প্রায় এক একর জমির ওপর নির্মাণাধীন এই ভবনে মাটির নিচে তিনটি এবং ওপরে ছয়টি তলা থাকছে। প্রায় ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে এই ভবন।
গত মার্চে প্রকাশিত মুক্তযুদ্ধ জাদুঘরের ২০তম বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা যায়, জাদুঘর নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী সরকারি তহবিল থেকে ৩৫ কোটি ও বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে। ভবনটি নির্মাণে ১০৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তোলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ সেগুনবাগিচার একটি পুরোনো দ্বিতল বাড়িতে যাত্রা শুরু হয় এ জাদুঘরের। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে শুরু হয় এ জাদুঘর। তখন থেকে্ই্ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপন করতে থাকে এখানে। প্রথম থেকেই ব্যাপক মানুষের সমর্থন ও সহায়তা পায় তারা।
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ১২ বছর পর ২০০৮ সালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থায়ী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নিমার্ণের জন্য ০.৮২ একর জায়গা বরাদ্দ দেয় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পরে ২০০৯ সালে উন্মুক্ত স্থাপত্য নকশা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জুরিবোর্ড মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপত্য-নকশা নির্বাচন চূড়ান্ত করে। ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকস্-এর সহযোগিতায় জাতীয়ভাবে একটি স্থাপত্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত ৭০টি নকশার মধ্যে তরুণ স্থপতি দম্পতি তানজিম ও ফারজানার স্থাপত্যকর্মটি চূড়ান্ত হয়। ২০১১ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নতুন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালের শুরুর দিকে শুরু হয় এ ভবন নির্মাণের কাজ। ভবনটি নিচের ভূগর্ভস্থিত তিন তলাসহ নয় তলার মোট দুই লাখ বর্গফুট জায়গা সন্নিবেশিত।
ছয়টি প্রদর্শনশালা নিয়ে কার্যালয়, পাঠাগার, আর্কাইভ, স্টোর, নির্মাণাগার, অডিটোরিয়াম, উন্মুক্ত মঞ্চ, ক্যান্টিন, কিয়স্ক, উপহার বিতান রয়েছে। বর্তমানে সেগুনবাগিচা ভবনে দুই তলায় মাত্র চার হাজার বর্গফুট পরিসর রয়েছে।
জাদুঘর সূত্রে জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরের জন্য দরকারি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নিবন্ধন ও সদস্যভুক্তি মুক্তিযু্দ্ধ জাদুঘর লাভ করেছে। যেমন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, এনজিও , ট্রাস্ট্রি বোর্ড রেজিস্ট্রেশন, ইন্টরন্যাশনাল কোয়ালিশন আর হিস্টকি সাইট মিউজিয়ামস অব কসসিয়েন্স ইত্যাদি।
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল, ঘটনা, ব্যবহৃত দ্রব্য ও অস্ত্রসামগ্রী, অত্যাচারের নিদর্শন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অমানবিক হত্যার নিদর্শনসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি সংরক্ষিত থাকবে জাদুঘরে।
‘প্রতিটি ইট বলবে জাতির গৌরবকথা’ শিরোনামের ব্যানারে লেখা আছে- ‘ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে তুলছে নিজস্ব ভবন। আপনিও হতে পারেন সেই ভবনের গর্বিত অংশীদার। পৃষ্ঠপোষক সদস্য: ৫০ লাখ বা তার বেশি, স্থাপনা সদস্য: ১৫ লাখ, উদ্যোক্তা সদস্য: ৩ লাখ, আজীবন সদস্য: ১ লাখ, একটি প্রতীকী ইট ক্রয়: ১০ হাজার টাকা।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর রফিকুল ইসলাম জানান, এখনও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুদান দেয়ার সুযোগ রয়েছে। ৫ সেগুন বাগিচায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘর। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
ঢাকাটাইমস