বাবা আলমগীরকে নিয়ে মেয়ে আঁখির স্মৃতিচারণ
আঁখি আলমগীর, অতিথি লেখক
আমার কাছে বাবা মানে, একটা ঘরের ছাদ। সবকিছু থেকে পরিবারকে প্রটেক্ট করে। আর বিশেষভাবে আমি যদি আমার বাবাকে নিয়ে বলি, আমার বাবা একজন স্বনামধন্য অভিনেতা। সবার প্রিয় এই মানুষটাকে বাবা হিসেবে পাওয়াটা আমার জন্য সত্যিই গর্বের।
আমি বাবা-মার বড় মেয়ে। উনাদের কাছে আমি ছিলাম ‘খেলার পুতুল’। ছোটবেলার ছোট ছোট আবদারগুলো বাবা হাসিমুখে মেটাতেন। বাবার সঙ্গে আমার হাজার হাজার স্মৃতি জমানো আছে। বলে শেষ করা যাবেনা। তবে আজ সেই ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে। তখন আমার বয়স আর কতোই, ছয় কী সাত। বনানীতে থাকতাম। আব্বু তখন তুমুল ব্যস্ত হিরো। রোজ রোজ থাকে শুটিংয়ে ডেট।
বছরে পনেরটার মতো সিনেমা বেরুতো। কাজের চাপ ছিলো প্রচুর। অনেক সময় চার শিফটে শুটিং করতেন। শুটিং শেষে রোজ রাতে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। আমরা ঢুলুঢুলু চোখে অপেক্ষা করতাম বাবার জন্য। আর মা আমাকে নিয়ে খুব বিপাকে পড়তেন। কিছুতেই খাওয়াতে পারতেন না। বলতাম, বাবা না এলে খাবো না। চুপটি মেরে শুয়ে থাকতাম। সিড়িতে পায়ের আওয়াজ পেলেই লাফিয়ে উঠতাম। এই বুঝি বাবা এলো! বাবা আমাকে পেয়েই ক্লান্তি ভুলে যেতেন। কোলে নিয়ে ছাদে যেতেন। নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন। বাবার কোল ছিলো আমার পরম আশ্রয়।
বাবা আলমগীর যেমন আমার খুব প্রিয়, অভিনেতা আলমগীরও তাই। অভিনেতা হিসেবেই দেশের মানুষ আজ আমার বাবাকে চেনে। অথচ বাবার কিন্তু অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নই ছিলো না। সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু যেখানেই যেতেন সবাই বলতেন, এমন হ্যান্ডসাম চেহারা আপনি তো হিরো হতে পারেন।
পরে সিনেমার নাম লেখানোর পর বাবার সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্নটা ভেস্তে যায়। সেকারণেই বাবা হয়তো চেয়েছিলেন আমি অন্তত সঙ্গীতশিল্পী হোক। বাবার সেই স্বপ্নটা অপূর্ণ রাখিনি। তবে এখানকার মতো দেশজুড়ে গাইবো বাবা ভাবেননি। তিনি ভেবেছিলেন, তার প্রিয় গানগুলোই আমি শুধু তাকেই শোনাবো, ঘরোয়া আয়োজনে। কিন্তু আস্তে আস্তে গাইতে গাইতে এতদুর আমার আসা। এখন আমি যেমন অভিনেতা আলমগীরকে নিয়ে গর্ব করি, বাবাও তেমনি সঙ্গীতশিল্পী আঁখি আলমগীরকে নিয়ে গর্ব করেন। প্রচন্ড ভালোবাসেন আমার গান। আমি নতুন কোন গান বাঁধার সময় দর্শকদের ভালোলাগার পাশাপাশি ভাবি, গানটা বাবার ভালো লাগবে তো। এখনো একটু ফুসরত পেলেই বাবার সঙ্গে আড্ডা দিই। বাবার সঙ্গে অনেককিছুই অগোচরে শেয়ার করি। ছোটবেলায় যেমনটা পারতাম না।
এই তো কয়েকদিন আগেই বাবা বললেন, সিনেমা দেখবো। আমার মেয়েসহ সবাই মিলে ফ্যামেলি গেটটুগেদার হলো। রাতভর বাবার সিনেমা দেখলাম। বাবা সচরাচর রাত জাগতে পারেন না খুব একটা। কিন্তু সবাইকে পেয়ে এতোটাই উচ্ছ্বসিত ছিলেন যে, ঘুমাতেই ভুলে গেলেন। বাবার ছবি দেখে আমার মেয়েরাও তুমুল এক্সাইটেড। তারা বাবাকে বললো, নানা তুমি এতো হ্যান্ডসাম ছিলা। ডিজিটাল প্রিন্ট হলে তোমাকে যে দুর্দান্ত লাগতো।
আমি মনে করে, বাবা একজন ফাইটার। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেন। মানুষ কি বলল না বলল তাতে যায় আসে না। আমরা নিজেরা নিজেদের মতো করে ভালো আছি।
লেখক: সঙ্গীতশিল্পী