adv
২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত পরিস্কার ফেবারিট-মাশরাফি

image003জহির ভূইয়া ঃ বিশ্ব ক্রিকেট বোদ্ধারা তাকিয়ে আছে কাল মিরপুরে বাংলা-ভারত ক্রিকেট যুদ্ধের দিকে। আর বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত আর সাধারন কাল ফাইনালে জয় দেখতে চায়। সঙ্গে ঢাকার মানুষের কাছে মিরপুরের গ্যালারিতে বসে কাল ফাইনাল দেখা এখন স্বপ্ন। সকা্ল থেকেই মিরপুরের ১০ নম্বর গোল চক্করে ভয়াবহ টিকিট সংগ্রহের যুদ্ধ। পুলিশ জনতা যুদ্ধে লিপ্ত, বাধ্য হয়ে পুলিশ লাঠি ব্যবহারে বাধ্য হয়। অথচ মাশরাফি বলছেন িএটা একটি সাধারন ম্যাচ ছাড়া আর কিছু নয়।

দুপুরে ছিল মাশরাফিদের ফাইনালের আগে আনুষ্ঠানিক শেষ অনুশীলন।তাই অনুশীলনেরআগেই মাশরাফি নিয়ম রক্ষার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হলেন। ক্রিকেট জ্বরে ভূগতে থাকা বাংলাদেশের ভক্তদের বলেন,“এটা স্রেফ আরেকটি ম্যাচ মাত্র। অবশ্যই এটা ফাইনাল, ফ্লেভার আলাদা হবেই। তবে আমরা অন্য সব ম্যাচের মতোই দেখছি। নিজেদের সেরাটা খেলতে চাই। গত ৩ ম্যাচে যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই খেলতে চাই।”

লঙ্কানদের বাজে খেলা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অধিনায়ক বলেন,“শ্রীলঙ্কা কিন্তু এখনও টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন। এভাবে বলা তাই ঠিক না। এই টুর্নামেন্টে হয়ত ভালো করতে পারেনি, তবে তারা ভালো দল। এমনকি পাকিস্তানও। আমরা আগের চেয়ে ভালো খেলছি, কিন্তু এখনও উন্নতির অনেক কিছু আছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আমাদের লক্ষ্য সেটিই। এশিয়ান পাওয়ার হাউজ হওয়া বা এই ধরণের কিছু নয়।”

মাশরাফির অধিনায়কত্বে বড় ম্যাচকোনটি? চানতে চাইলে বলেন,“অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বড় ম্যাচ ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। এটি অন্যতম বড় ম্যাচ অবশ্যই। তবে তুলনা করলে সেই ম্যাচ আরও বড় ছিল। কারণ ৫০ ওভারের ক্রিকেট ও বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল, ওই ম্যাচ আরেকটু বড় ছিল।”

ফাইনালে নিয়ে ডে পরিস্থিতি তা থেকে দলকে চাপ মুক্ত রাখা প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন,“এসব আসলে আমাদের চিন্তা করার বিষয় না। পেশাদার হিসবে আমরা পরিকল্পনা করতে পারি, আমাদের উচিত শুধু ম্যাচ নিয়েই ভাবা। আমরা সেটাই চাচ্ছি এবং করছি। ছেলেরা যতটা সম্ভ নরম্যাল থাকার চেষ্টা করছে। টুর্নামেন্টের শুরুতে একটা কথা আমি বলেছি যে আমরা অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ছিলাম না। আমরা চেয়েছিলাম যে, এশিয়া কাপের আগে যেভাবে খেলছিলাম, সেটায় যেন উন্নতি করতে পারি। গ্রাফটা উর্ধ্বমুখি মানে এই না যে আমরা বড় দল হয়ে গেছি। আমরা যেভাবে উন্নতি করছি, এরকম করতে থাকলে আমরা ভালো করতে পারব।”

ভারতের ব্যাটিং লাইন নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মাশরাফি জানান,“দেখুন, ভারতের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কোনো প্রশ্নই নেই। ওদের টপ ৬ ব্যাটসম্যানই বিশ্বমানের, বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। টেস্টেও অনেকেই আছেন। কোনো সন্দেহ নেই যে সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গায় আটকানোর সুযোগ নেই। প্রথম ওভার থেকে ২০ ওভার পর্যন্ত ভালো বোলিং করতে হবে। ওরা অবশ্যই চার্জ করবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব মিনিমাইজ করা। সুতরাং সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গায় তাকিয়ে নেই। তবে এই ধরণের ম্যাচে প্রথম ৬ ওভার বা শেষে ড্যামেজগুলা হয়। সেদিকে ফোকাস বেশি থাকবে।” 

গ্যালারি ভরা ভক্ত! চাপ কতটা? জবাবে বলেন,“ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি দর্শক, সবসময়ই ছিল, এখনও। দর্শক না থাকলে আমরা এতটা অনুপ্রাণিত হতাম না। আমাদের ক্রিকেট ওই পর্যন্ত আসার পেছনে জনসাধারণের অনেক অবদান, অনেক ত্যাগও আছে। এটা আমাদের জন্য ভালো একটি সুযোগও। আমরা যদি ভালো খেলতে পারি, ভালো কিছু করতে পারি, তাহলে অবশ্যই সবাই খুশি হবে। আমাদের জন্য তাই দারুণ সুযোগ।” 

প্রধানমন্ত্রী থেকে আমজনতা, সবার আবেগ নিয়ে কি ভাবছেন অধিনায়ক? বলেন,“আবেগ থাকা খুবই স্বাভাবিক। কারণ আরা সবসময়্ এরকম সুযোগ পাই না। তারপর আবার দেশের মাটিতে খেলা। আর রবি শাস্ত্রী যেটা বলেছেন, উনাদের জন্য হয়ত আর দশটা ম্যাচের মত নেওয়া সহজ। কারণ এই ধরণের টুর্নামেন্টে অনেকবারই তারা ফাইনাল খেলেছে, বিগ হাইপ ম্যাচ খেলেছে। তাদের জন্য যতটা সহজ, আমাদের জন্য আর দশটা ম্যাচের মত নেওয়া অতটা সহজ নয়। তারপরও চেষ্টা করছি যতটা নরম্যাল থেকে ক্রিকেট খেলা যায়।” 

২০১২ ফাইনালের মত পরিস্থিতি হবে কি-না! বলেন,“ওরকম পরিস্থিতি হলে হয়ত বেটার হবে। তবে এভাবে বলতে পারব না যে চার বছর আগের সেই ফাইনালে অত কাছে গিয়েছি বলেই এবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। তবে যদি ক্লোজ হয়, ওরবকম পরিস্থিতি হলে হয়ত চার বছর আগের তুলনায় ভালো করতে পারব। কিন্তু আবার বলছি, টি-টোয়েন্টি খেলাটাই হলো সুনির্দিস্ট দিনে যে ভালো খেলবে।”

ভারতকে হারানোর বাস্তব সম্ভাবনা কতটা? মাশ বলেন,“শক্তির জায়গা গুলো বলতে, আমাদের  বেশ কজন তরুণ ক্রিকেটার আছে। তারা যে শধু সম্ভাবনাময়, তাই নয়। সেই সম্ভাবনাকে তারা কাজে লাগাতে পারছে। এটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ভারত-বাংলাদেশের ফাইনাল ম্যাচে কিন্তু ভারত পরিস্কার ফেবারিট। এটা সবাই জানে। এখানে আলাদা করে চিন্তা করার সুযোগ নেই। আমরা একটা দল হিসেবে খেলছি। টি-টোয়েন্টিতে এখনও আমরা সেরকম ক্রিকেটার গড়ে তুলতে পারিনি যারা একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। গত দুটি ম্যাচ আমরা দল হিসেবে খেলে জিতেছি। এই মুহুর্তে আমাদের দলীয় একতা দারুণ। সেটাকেই রাখতে চাই। আর অবশ্যই খুব ভালো সুযোগ, দর্শক, মাঠ, ড্রেসিং রুম, সব আমাদের পক্ষে । তবে এটাই শেষ কথা নয়, সব কিছু পক্ষ থাকলেই যে দিন আমাদের হবে, এটার নিশ্চয়তা নেই “ 

ফাইনালের ১ দিন পরই বিশ্বকাপ টি২০। কি ভাবছেন? বলেন,“এটা কঠিন তো বটেই, সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের সুযোগ নেই…যদি আমরা ৬ তারিখে গিয়ে ১ দিন বাড়তি সময় পেতাম, তাহলে সেটা দেখা যেত। তরুণদের জন্য এটা ভালো হয়েছে যে কারিয়ারের শুরুতেই এত বড় ম্যাচে খেলা মানে তারা এখন থেকেই মানসিকতা গড়ে তুলতে পারবে, এভাবেই নিজেদের তৈরি করতে হবে যে পেশাদার ক্রিকেটারদের জীবনটা এরকমই হয়। এটার মধ্যে আনন্দ আছে। সেটা ধরতে হবে। ফাইনালে না উঠলে হয়ত এই ফ্লেভার গুলো পেতাম না, চলে যেতাম। এখন আমার মনে হয় সবাই এটা উপভোগ করছে।

৪৫ রানে প্রথম ম্যাচে হার আবারও সেই ভারত! মাশ বলেন,“প্রথম ম্যাচে ২০০ রানে জিতলেও সেটা আমার জন্য কোনো কাজে লাগত না। অধিনায়ক হিসেবে আমাকে সেটা কোনো সাহায্য করে না। হ্যা, দল হিসেবে খেললে আত্মবিশ্বাস ভালো থাকে। একজন-দুজন দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না, বিশেষ করে আমাদের দলে। দল হিসেবে খেলছি, সেটাতেই মন দিচ্ছি।” 

মাশরাফি পেস তারকা মুস্তাফিজকে ছাড়া খেলা প্রসঙ্গে বলের,“ওকে ছাড়া খেলা মানে এই মুহূর্তে আমরা আমাদের সেরা বোলারকে ছাড়া খেলছি। কিন্তু মুস্তাফিজের জায়গায় গত মাচে দেখেন, তাসকিন-আল আমিন সবাই ভালো করছে। এটা একটা দলের জন্য ভালো ব্যাপার যে, সেরা বোারটি না থাকার পরও অন্যরা দায়িত্ব নিচ্ছে ও পারফর্ম করছে। এটা ভালো লক্ষণ। আমি বিশ্বাস করি আমাদের ভালো ক্রিকেটার আছে। বিশেষ করে টপ অর্ডারে। সাকিব-তামিম- সৌম্য-সাব্বির-মুশফিক, সবাই ম্যাচ বদলে দিতে পারে। অবশ্যই টি-টোয়েন্টিতে আরেকটা জায়গা আছে। সাত-আটে নেমে ম্যাচের গতি বদলে দিতে পারে না। সেখানে আমাদের এখন বিশ্বমানের কেউ নেই। তবে টপ অর্ডারে বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান আছে “

১ নম্বর আর ১০ নম্বরের লড়াই। আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ের প্রসঙ্গে দৃস্টিআনলে অধিনায়ক বলেন,“রোমাঞ্চ না, বাস্তবতা। খেলার মাঠে আমরা শতভাগ দিয়েই চেষ্টা করব। নিজেদের যা করণীয়, সেটার সবোচ্চটা করার চেষ্টা করব। ভাগ্যের আশায়ও কিছুটা আছি আমরা, ভাগ্যকে পাশে পেলে ম্যাচ অবশ্যই আমাদের দিকে আসতে পারে। এই ধরণের টুর্নামেন্টে আমাদের ফাইনাল খেলা খুব বিরল। এইরকম পরিসিথতিতে একটা সুযোগ থাকে অনেক সময় পাজলড হয়ে যাওয়ার। মাথা কাজ না করা বা এই পরিম্থিতিতে পড়লে কি করতে হবে…। তবে আমি মনে করি, এই ধরণের ফাইনাল তারাই জেতে যারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। সিদ্ধান্ত মানে প্রয়োজনের সময় আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নিতে কখও সংশয়ে ভোগে না। আমরা চেষ্টা করব যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই ফ্রিডম নিয়ে খেলার। এতবড় হাইপের ম্যাচ খেলার অভ্যাস যেহেতু খুব বেশি নেই, আমরা চেষ্টা করছি চাপটা থেকে যেন যতটা মু্ক্ত থাকা যায়।”

ভক্তদের একটি টিকিট পেতে যেসব ঘটনা জন্ম দিচ্ছে সে সম্পর্ মাশরাফি বলেন,“সকালেই দেখেছি, অনেক মানুষ টিকিটের জন্য লাইন দিয়ে আছে। একটি টিকিটের জন্য অনেক কষ্ট করেছে, অনেকেই নাকি বেশ সমস্যায়ও পড়েছেন। আমরা ভালো খেললে প্রায়ই এটা হয়ে আনছে। এখন আরও বেশি হচ্ছে। আমি আশা করব, পুরো দলই চেষ্টা করবে ভালো কিছু করার। না জিতলে কিছুই না। আমি এটাই বিশ্বাস করি। এমন নয় যে হেরে গেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখানেই থেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক উজ্জ্বল ভবিষ্যত আছে। এই টুর্নামেন্ট খুব ভালো একটি বার্তা দিয়েছে যে টি-টোয়েন্টিতেও আমরা এগিয় যাচ্ছি। এটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। জিতলে অসম্ভব ভালো লাগবে। কিন্তু না জিতলে কিছুই না। আমরা ঠিকই সামনের দিকে এগিয়ে যাব এবং ভালো করব।

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া