adv
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৫ উইকেটের বিশাল  জয়, ফাইনালে বাংলাদেশ

Asia cup logo 2016.psdজহির ভূইয়া ঃ রাত ১১টা। মিরপুরের গ্যালারি চিৎকারে ফেটে পড়েছে। কারন এই মাত্র মাহমদুল্লাহ রিয়াদ ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে ফাইনালে নিয়ে গেছে। সঙ্গী ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। এশিয়া কাপের ফাইনালে আবারও বাংলাদেশ। ৫ বল না খেলেই বাংলাদেশ টার্গেট স্পর্শ করে (১৩১/৭)। টি২০ ফর্মেটে নতুন যুগের সূচনা হল। মাশরাফিরা টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে একে বারেই তলানিতেই অবস্থান করছিল। সেই বাংলাদেশ টি২০ ফর্মেটে এখন বড় দল হিসেবে আতœ প্রকাশ করেছে। কারন টি২০ ফর্মেটের এশিয়া কাপের ফাইনালে যে এবার বাংলাদেশের নাম লেখা হয়ে গেছে। 

২০১২ সালের সেই স্মৃতি গুলো আবারও সামনে চলে এসেছিল। কারন ১২৯ রানের জবাবে ১৩০ রানের টার্গেটে মাশরাফিদের জয় পেতে শেষ ১২ বলে ১৮ রানের দরকার ছিল। আর শেষ ৭ বলে ৯ দরকার । টান টান উত্তেজনা প্রেস বক্সে আর মিরপুরের গ্যালারিতে। মাহমুদুল্লাহ চার মেরে দিলে আর চিন্তা মুক্ত হয়ে যায় বাংলাদেশ। হাসি ফুঠে উঠে দর্শকদের মুখে। তবে এটা ঠিক ২০১২ সালের সেই হারের কথা কিছুক্ষনের জন্য মনে করিয়ে দিয়ে ছিল পাকিস্তান। ১২৭/৫, আর শেষ ৬ বলে ৩ রানের দরকার ছিল। সামীর বল আকাশে তুলে দিলে সেটা ঠিকানা খুঁজে নেয় মাঠের বাইরে।

২২ মার্চ, ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ২ রানে পাক শিবিরের বিপক্ষে হারের দিন মিরপুরে ভিআইপি বক্সে বসা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সে দিন পুরো দেশের সঙ্গে তিনিও কেঁদে ছিলেন। সেই হারের জ্বালাটা আর শোধ আজ মাশরাফিরা এশিয়া কাপের ফাইনালে যাবার পথে পাকদের ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী সহ পুরো দেশকে মিটিয়ে দিয়েছে। মার্চ মাসে পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ-টাই যে অন্য রকম। পাক শিবিরের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের টি২০ ম্যাচে দ্বিতীয় জয়।

৬ মার্চ ফাইনালে খেলবে স্বগতিক বাংলাদেশ আর ভারত। টি২০ বিশ্বকাপ আসরের আগে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলবে মাশরাফিরা। এটাও একটা বিশাল অনুশীলন আর অভিজ্ঞতা। পাক শিবির টস জিতে ব্যাট হাতে ১২৯ রানের সংগ্রহ বিশাল কিছুই মনে করেনি মাশরাফি বাহিনী। তাই ১৩০ রানের জয়ের মিশনে ৫০ রানের সংগ্রহ চলে আসে ৮.৬ ওভারেই। দলীয় ১৩ রানের মাথায় ফিরে আসা তারকা তামিম ৭ রান করে এলবি’র ফাঁদে কাটা যান পেসার ইরফানের বলে। এরপর ৪৬ রানের মাথায় ওয়ান ডাউনে নামা সাব্বির ১৪ রানে আফ্রিদির বলে বোল্ড! কিন্তু ওপেনার সৌম্য সরকার ছিলেন। সঙ্গে যোগ দিলেন মুশফিক। ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৬৫ রান, শেষ ৬০ বলে দরকার ৬৫ রান। মুলত মুশফিক ছিলেন এক প্রান্ত ধরে রাখার দ্বায়ীতে। আর সৌম্য সরকার ছিলেন রান তোলার কাজে নিয়োজিত।

সৌম্য এই আসরে আজই প্রথম ব্যাট হাতে সফলতা দেখালেন। যে ম্যাচে জয়টা শুধু জরুরীই নয় অতিজরুরী বিষয়। সে পথেই হাটতে থাকা সৌম্য ৪৮ রানে আমিরের বলে বোল্ড! আর মুশফিক অনভিজ্ঞের মতো এলবি’র ফাঁদে ১২ রানে শোয়েব মালিকের বলে! ৮৮ রানে ৪ উইকেট! বাংলাদেশ ড্রেসিং রুমে তখন কিছুটা অন্ধকারময়। ৩০ বলে ৪০ রান দরকার আর তখন ক্রিজে আশার আলো জ্বালিয়ে সাকিব-মাহমুদুল্লাহ জুটি। এই জুটি ভালই জবাব দিলেনআফ্রিদির বোলারদের। ১৮ বলে ২৬ রান দরকার। দলের রান ১০৪। সাকিব ৮ আর মাহমুদুল্লাহ ৯ রানে। আমিরের বল সরে গিয়ে উইকেটের পেছনে মারতে গেলেন সাকিব! সরাসরি বোল্ড! রেগে গিয়ে সাকিব ব্যাট দিয়ে আঘাত করলেন স্ট্যাম্পে। আতঙ্কিত গ্যালারির দর্শক। মাশরাফি নেমেই আমিরের বলে চার মেরে মুখে হাসি ফেরানোর চেস্টা করলেন। পরের বলে আবারও চার।

শেষ ১২ বলে ১৮-র টার্গেট, হাতে ৫টি উইকেট। ক্রিজে মাহমুদুল্লাহ-মাশরাফি। পেসার সামীর বলে চার মারতে গেলেন, কিন্তু ক্যাচ। কপাল ভাল যে নো বল ছিল। বেঁচে গেলেন মাশরাফি আর বেঁচে গেল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে ৬ বলে ৩ রানের দকার ছিল। সেটা পূর্ন হল ছক্কা দিয়ে, ১৯.১ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩১।

২৪ এপ্রিল ২০১৫ সালে এই মিরপুরেই পাকিস্তান মাশরাফিদের বিপক্ষে ৮ম টি২০ ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরেছিল। সেই উইকেটেই আজ এশিয়া কাপের টি২০ ম্যাচে মাশরাফিদের বিপক্ষে করেছে ৭ উইকেটে ১২৯। টস জিতে পাকরা ব্যাট হাতে তুলে নিলে ২৮ রানে ৪ উইকেট হারায়। ৫ম জুটি যদি ৭০ রানের জুটি গড়তে সফলতা না দেখাতো তাহলে ১২৯ রানে পুঁজিও হত-কিনা সন্দেহ ছিল।

বল হাতে শুরু থেকেই মাশরাাফিরা ছিল আক্রমনে। প্রমান হিসেবে বলা যায় ৫ ওভারে মাত্র ১৮ আর উইকেট ৩টি! এই ম্যাচটা জিতে গেলেই বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালের টিকিট পাবে। ফিল্ডারদের দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর তিন পেসারের কঠিন নিয়ন্ত্রিত বোলিং পাকদের ১২৯ রানে বেঁধে ফেলে। টি২০ ম্যাচে পাক ব্যাটসম্যানদের ওয়ানডে ম্যাচের আদলে খেলতে বাধ্য করে মাশরাফি বাহিনী, যে কারনে দাঁড়ায় টার্গেট ১৩০।

এ যাবত কালে টি২০ ফর্মেটে পাকিস্তান-বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছে ৮ বার। তাতে ১টি মাত্র জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে মিরপুরে। আর ৮ ম্যাচে ৬ বারই পাক শিবির আগে ব্যাট করেছে। এবার নিয়ে ৭ম বার। এবারই পাক শিবির টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে সর্বোনি¤œ স্কোর করেছে (১২৯)। এর আগে ২০১১ সালে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে করেছিল ১৩৫।

২০০৭ সালে পাকদের বিপক্ষে মাশরাফিদের টি২০ ম্যাচে প্রথম দেখা হয়। আর ২০০৮ সালে পাক শিবির নিজেদের ঘরের মাঠে করাচী ন্যাশরাল স্টেডিয়ামে করেছিল টি২০ ফর্মেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। ৫ উইকেটে ২০৩, এবং জিতেছিল ১০২ রানে আর টাইগাররা করেছিল ১০১ রান।

সেই বাংলাদেশই ৮ বছর পর টি২০ ম্যাচে দাঁড়াতে দেয়নি পাকদের টপ অর্ডারকে। ৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১৮ রান! ওপেনার খুরাম আল আমিনের বলে দ্বিতীয় ওভারের শুরুতেই উইকেটের পেছনে বন্দি। দলীয় রান তো মাত্র ১! আর সারজিল খান ১০ রানে, সঙ্গী নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ। ১০ রানে থাকা সারজিল খান বোল্ড হলেন আরাফাত সানীর বলে। আর মোহাম্মদ হাফিজ ২ রানে মাশরাফির বলে এলবি’র ফাঁদে পড়লেন। ৩ উইকেটে ১৮ রান, ৪.৫ ওভার শেষ হয়েছে। তাসকিন ১ রানে বিনা উইকেট,আল আমিন ১টি, আরাফত ১টিও ও মাশরাফি ১টি। ওভার প্রতি রান রেট ৩.৬!

সারফারাজ খান ৫ রানে আর ওমর আকমল শূণ্য রানে ৪র্থ জুটি পাকদের আশার আলো দেখানোর চেস্টা-টাও বিফলে গেল পেসার তাসকিনের কারনে। কারন ৪ রানে থাকা ওমরকে তাসকিন ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন। ফিল্ডার সাকিব ক্যাচি মুঠো বন্দি করলে পাকদের স্কোর ২৮ রানে ৪ উইকেট। এরপর ৫ম জুটিতে র এই জুটি ১০ ওভার পর করে নিয়ে যায়, স্কোর ১০ ওভারে ৩৪/৪! এই জুটি ১৫ ওভার পর্যন্ত টিকে যায়। ৭৯ রানে ১৫ ওভার শেষ করে ৫ম জুুটি। সারজিল খান ৩৬ আর শোয়েব ২৬ রানে। 

আমিরাতের বিপক্ষে ১৩০ রানের টার্গেটে ১৭ রানে ৩ উইকেট পতনের পর ৪র্থ জুটি খেলা শেষ করে দিয়েছিল। এবার পাকদের ৫ম জুটি মাশরাফিদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। সংগ্রহ করে দলীয় রান ২৮ থেকে ৯৮ পর্যন্ত। অভিজ্ঞতার প্রমান দিলেন শোয়েব মালিক। ৪১ রান করা শোয়েব আরাফাতের বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিলেন তখন ইনিংস শেষ হতে বাকী ১৯ বল। শেষ দিকে আফ্রিদিও টিকলেন না। আল আমিনের বলে সাব্বির হাতে ক্যাচ দিলেন শূণ্য হাতেই। আর ইনিংসের শেষ বলে আল আমিনের ডেলিভারি তুলে দিলে ৭ম উইকেটের পতন ঘটে। ১৩ রান করা আনোয়ার আলী ক্যাচ ধরতে ভূল করলেন না। ৭ উইকেটে ১২৯।
 

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া