মাশরাফির কুমিল্লা সরাসরি ফাইনালে
জহির ভূইয়া ঃ বিপিএলের তৃতীয় আসরের কোয়াটার ফাইনাল বা সেমিফাইনাল পর্ব যাই বলা হউক না কেন তাতে মাশরাফির কুমিল্লা মিশন শতভাগ সফল। বিপিএলের আসরে প্রথম বার নাম লেখানো কুমিল্লা সরাসরি ফাইনালের টিকিট কেটে নিয়েছে রংপুরকে ৭২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে। আজ মিরপুরের উইকেট দুপুরের ম্যাচে টস হেরে কুমিল্লা সংগ্রহ করে ৭ উইকেটে ১৬৩ আর জবাবে রংপুর ৩ ওভার বাকী রেখেই ৯১ রানে অলআউট! দাঁড়াতেই দেয়নি কুমিল্লার দুই বোলার আবু হাইদার আজহার জাইদি। এই দুই বোলারই শিকার করলেন ৪টি করে ৮টি উইকেট।
অপর দিকে রাতের ম্যাচে ঢাকা আর বরিশালের মধ্যে যে দল জিতবে তারা খেলবে কাল রংপুরের বিপক্ষে। কালকের ম্যাচে যে দল জিতবে সে দলই ১৫ ডিসেম্বর মিরপুরে কুমিল্লার বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে নামবে। এই হচ্ছে আপাতত হিসেব।
১৬৪ রান তাড়া করে কুমিল্লার বিপক্ষে জয় পাওয়াটা যেন রংপুরের জন্য কঠিন সেটা শুরুতেই পরিস্কার হয়ে যায়। ওপেনার সৌম্য সরকারকে ৯ রানের মাথায় ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন বিপিএলের টপ বোলার আবু হাইদার। আর অপর ওপেনার লিন্ডেল সিমন্সকেও আবু হাইদার ফেরত পাঠালেন। দলের রান তখন সেই ৩৬ রানেই দাঁড়িয়ে। বোল্ড হলেন সিমন্স। সেই থেকে রংপুরের আসা-যাওয়ার পালা শুরু। রংপুর পানি বিরতি যাবার আগেই ৪ উইকেট হাওয়া। স্কোর ৯ ওভারে কি-না ৫২! আজাহার জাইদি মিডল অর্ডারে নামা মিথুনকে ৫ রানে লিটনের হাতে স্ট্যাম্পিং করলেন। এই বোলারের বলেই যখন সাকিব আল হাসান মাহমুদুল হাসানের হাতে ক্যাচ দিলেন তখন বোঝা গেল রংপুরের আশা শেষ হয়ে গেছে।
৪৫ রানে ৪ উইকেট স্কোর নিয়ে তো ১৬৪ রানের জবাব দেয়া অতো সহজ কম্ম নয়। দলীয় ৬২ রানে আর নিজের ১২ রানে মোহাম্মতদ নবী মাশরাফির বলে ক্যাচ দিলেন। এবং ওয়ান ডাউনে নামা অভিজ্ঞ জহুরুল ইসলাম জাইদির বলে ক্যাাচ দিলেন তখন দলের রান ১১.১ ওভারে সেই ৬২-তেই দাঁড়িয়ে ছিল। ৪১ বলে ৯৭ রান দরকার আর হাতে ৪ উইকেট। হিসেবটা আরও কঠিন করে দিলেন দলের ৬৮ রানের মাথায় রাসেল আল আমিনকে ৩ রানে বোল্ড করলে। রংপুরের দলীয় স্কোর ৮২ রানে পেরেরাকে আর ৮৪ রানে ড্যারেন স্যামীকে বোলার জাইদি শিকারে পরিনত করলে কুমিল্লার ড্রেসিং রুম আনন্দ করার অপেক্ষায়। কারন ৯ উইকেটে ৮৪ রান, শেষ উইকেটটিও পকেটে করলেন আবু হাইদার। এর সঙ্গে নিজের শীর্ষ বোলারের পুরস্কারের দাবীটাও আরও শক্ত করলেন হাইদার।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামে কুমিল্লা। ১৬৩ রানে ৭ উইকেটে। আর তাতে ২৬ রানে ৫টি উইকেট পকেটে জমা করলেন থিসারা পেরেরা। তা নয় তো রানের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়তে হতো রংপুরকে। ওপেনিং জুটিতে ইমরুল আর লিটন দাসের জুটি যেভাবে শুরু করে ছিল তাতে মনে হয়েছিল বিপিএলের প্রথম দিন রংপুরের করা সেরা দলীয় স্কোর ৮ উইকেটে ১৮৮ পেরিয়ে যাবে। রানের গতিও সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। ৭ম ওভার শেষে পানি বিরতিতে স্কোর বিনা উইকেটে ৫২ আর ইমরুল ৩০ বলে ৫০ রান সঙ্গে লিটন দাস ২০ রানে। কিন্তু দলের ৭৯ রানের মাথায় লিটন সাকলাইন সজিবের বল না বুঝে ক্রিজের বাইরে বেরিয়ে মারার চেস্টা বিফলে যায়। লাইন মিস করলেন লিটন। উইকেটরক্ষক মিথুন স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দিলেন।
এরপর তো ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু বেশি কিছু হল না। পেরেরার বলে মাশরফি তুলে দিলেন আর সাকিব যেন সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ইমরুল আর রাসেল আরনল্ড। ১৪.৫ ওভারে কুমিল্লার দলীয় স্কোর ২ উইকেট ১০০। ইমরুল ৫৮ রানে আর রাসেল ১ রানে অপরাজিত। এরপরই মুলত পেরেরা ঝড় তোলেন। দাঁড়িয়ে থেকে ইমরুল পেরেরার বল সরাসরি তার হাতেই উপহার দিলেন। ইমরুল যখন বুঝতে পারলেন ততোক্ষনে সব শেষ। ৪৮ বলে ৬৭ রানে ৭টি চার ও ১টি ছক্কা মারা ইমরুল বিদায় নিলেন। দলের রান যখন ১১২ তখন রাসেলকে ক্যাচে পরিণত করলেন পেরেরা। সেই ১১২ রানেই ২ রান করা অলক কাপালিকে ক্যাচ বানালেন। কিন্তু মিডল অর্ডারে আজহার জাইদি ধরে বসে ছিলেন। সঙ্গী শুভাগত হমো। ১৯ ওভার শেষে কুমিল্লার স্কোর ৭ উইকেটে ১৪৫। শেষ ৬ বলে ৪,১,৪,৬ ও ৩= ১৮টি রান আসে মোহাম্মদ নবীর ওভারে। স্কোর পৌচ্ছে যায় ১৬৩-তে। ৪০ রানে অপরাজিত থাকলেন আজহার জাইদি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড
টস রংপুর (ফিল্ডিং)
কুমিল্লা (২০ ওভার) = ইমরুল কায়েস ৬৭, লিটন দাস ২৮, আজহার জাইতি অপরাজিত ৪০ ও শুভাগত হোম ১২।
১৬৩/৭, বোলিং – থিসারা পেরেরা ৪-২৬-৫, মোহাম্মদ নবী ৪-৩৯-১ ও সাকলাইন সজিব- ৩-১৯-১।
রংপুর (২০ ওভার) = লিন্ডেল সিমন্স ২৫, মোহাম্মদ নবী ১২ ও থিসারা পেরেরা ১১। বোলিং- আজহার জাইদি ৪-১১-৪, আবু হাইদার ৩-১৯-৪ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা ৪-১৩-১।
ফলাফল- কুমিল্লা ৭২ রানে জয়ী।