adv
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘নিহত জাপানিজ রংপুরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন’

1443998576ডেস্ক রিপোর্ট : গত শনিবার রংপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত সেই জাপানি নাগরিক হোসে কোমিও তিন মাস আগে মুসলিম হয়েছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় যে বাড়িটিতে এই বিদেশি থাকতেন; তার পাশের মসজিদের ইমাম এবং ওই এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। মসজিদে টুপি পরে অনেকের সঙ্গে ৬৬ বছর বয়সী এই জাপানির একটি ছবিও বিলি করা হয়েছে।

একই মসজিদের মুয়াজ্জিন তাজুল ইসলাম বলেন, হোশি কোনিও শুক্রবার রংপুরের কেন্দ্রীয় মসজিদ কারামাতিয়া জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। পরদিন দুর্বৃত্তের গুলিতে তার নিহত হওয়ার খবর পেয়ে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।

মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু বলেন, গত রোজার ঈদের আগে ২৭ রমজানের দিন আছরের নামাজের পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এ সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম।

ইসলাম গ্রহণ করে হোসে 'গোলাম কিবরিয়া' নাম নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। এরপর থেকে তিনি প্রতি শুক্রবার বাড়ির পাশের এ মসজিদটি থেকে জুমার নামাজ আদায় করতেন। গত কোরবানির ঈদে মুন্সিপাড়া কবরস্থান মাঠে ঈদের নামাজও পড়েছিলেন তিনি।

মুন্সিপাড়া এলাকার আরেক বাসিন্দা মিজানুর রহমান রিপুও বলেন, তাকে কয়েকবার জুমার নামাজ পড়তে দেখেছি।

মুন্সিপাড়া কাদেরিয়া জামে মসজিদের ইমাম সিদ্দিক হোসেন বলেন, গত রমজান মাসে তিনি আমার কাছেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এ সময় এলাকার আরো ১২-১৩ জন মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। তিনি কয়েকবার আমার পেছনে নামাজও আদায় করেছেন।

রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় জাকারিয়া বালা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কোমিও। জাকারিয়ার দুই ভাই জাপানে থাকেন। সেই সূত্রে তার বাংলাদেশে যোগাযোগ।

হোসে বাংলাদেশে এসে একাই থাকতেন বলে জাকারিয়া জানান। তিনি বলেন, কাউনিয়ায় একটি ঘাসের খামার গড়ে তোলার কাজ করছিলেন এই জাপানি। ওই খামারে যাওয়ার পথেই মুখোশধারী তিন দুর্বৃত্ত কোমিওকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে একইভাবে হত্যা করা হয় ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ওই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে বলে দাবি ওঠে। কোমিও হত্যাকাণ্ডের দায়িত্বও আইএস নিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

আইএসের টুইট উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জোটের দেশগুলোর নাগরিকদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। মুসলমানদের মাটিতে তাদের নিরাপত্তা বা জীবিকা থাকবে না।

তবে বাংলাদেশ সরকারের প থেকে আইএসের সংশ্লিষ্টতার খবর নাকচ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই দলটির ততপরতা বাংলাদেশে নেই।

কোমিওর কোনো শত্রু ছিল না –
জাপানি নাগরিক কোমিও নিপাট ভদ্রলোক বলেই জানেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নে আলুটারী কাঁচু গ্রামের মানুষ। যে স্থানটিতে কোমিও ঘাস আবাদ করছিলেন, তার আশপাশের মানুষ জানান, ভাঙা বাংলায় সবার সঙ্গে কথাও বলতেন এই বিদেশি।

আজিজ মিয়া নামে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, তিনি প্রায় প্রতিদিনই এখানে আসতেন। ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলতেন। বেশ হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। কারো সঙ্গে দেখা হলে সালাম দিতেন, কেউ সালাম দিলে জবাবও দিতেন।

ঘাসের খামার এত ভালো একজন লোককে কেন এভাবে মেরে ফেলা হলো, তা গ্রামের কেউই বুঝে উঠতে পারছে না। আব্দুল হক নামে একজন বলেন, প্রতিদিন হীরা নামে একজনের সঙ্গে রিকশায় এলেও কোরবানি ঈদের পর থেকে একাই আসছিলেন তিনি।

জাকারিয়ার শ্যালক হীরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন। কয়েল নামে এক জাতের ঘাস চাষ করছিলেন কোমিও, যে ঘাস এ অঞ্চলে নতুন। ঘাসের খামারটি ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দুই একর জমিতে কয়েল প্রজাতির এ ঘাস, দেখতে অনেকটা ভুট্টা গাছের মতো। ঘাসগুলো ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা।

একবার মাঠে কাজ করার সময় তিনি বলছিলেন, জাপানে এ ঘাসটি ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা হয়, এখানে ১০ থকে ১২ ফুট হওয়ায় তিনি খুব খুশি ছিলেন।

কুনিওর ঘাসের খামার: রংপুর শহর থেকে একটু বাইরে রংপুর-হারাগাছ স্থানীয় সড়ক ধরে প্রায় দুই কিলোমিটার গেলে কাচু আলুটারি গ্রাম। পাকা সড়ক থেকে মেঠো পথ ধরে এক কিলোমিটারের মতো গেলেই কুনিও হোশির ঘাসের খেত। খেতের ঘাস তিন-চার ফুট লম্বা।

প্রায় প্রতিদিনই খামারে আসতেন কুনিও। আলুটারি গ্রামের আবদুল জব্বার বলেন, খামারে এসে ঘাস কত লম্ব হয়েছে তা মাপতেন, কখনো নিজেই নিড়ানি দিতেন। তাঁর দাবি, কুনিও তাঁকে বলেছেন, রংপুরের মাটিতে তাঁর প্রত্যাশামতো খুব দ্রুত বাড়ছে ঘাস। জাপানে এত দিনে এই ঘাস দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা হতো। এখানে তা তিন ফুট ছাড়িয়ে গেছে।

হত্যাকাল: রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া থেকে খামারে যেতেন মুন্নাফ আলীর রিকশায়। অন্যদিনের মতোই শনিবার সকালে মুন্নাফের রিকশায় তিনি খামারের দিকে রওনা দেন। রিকশাটি পাকা সড়ক ফেলে মাটির রাস্তায় ঢুকে ১০০ গজ এগোতেই সামনের দিক থেকে দুই ব্যক্তি এসে কুনিওকে ধাক্কা মেরে রিকশা থেকে ফেলে দিয়ে গুলি করে।

স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে শুনেছেন, কুনিওর রিকশাটি ওই এলাকায় আসার আগে লাল রঙের একটি ডিসকভার মোটরসাইকেলে তিনজন এসে কাঁচা রাস্তার মাথায় পাকা সড়কে থামে। এর নম্বরপ্লেটে শুধু ‘প্রেস’ লেখা ছিল। দুজন সেই মোটরসাইকেল থেকে নেমে হেঁটে মেঠোপথ ধরে কিছুটা এগিয়ে যায়। তারা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। কুনিওর রিকশাটি ওপাশ থেকে খোকা মিয়ার বাড়ির সামনে আসার পর ওই দুজন অস্ত্র বের করে এগিয়ে যায়। একজন কুনিওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়, আরেকজন তাঁকে গুলি করে।

উল্লেখ্য, কোনিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও তার পাসপোর্ট ও ভিসায় ‘হোশি কোনিও’ নাম ব্যবহার করেন। তিনি নিহত হওয়ার পর তার প্যান্টের পকেট থেকে পাসপোর্টটি উদ্ধার করে পুলিশ।

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া