ভারতীয় ব্যাংক কর্মকর্তার টাকা চুরি – শাস্তির ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিচ্ছেন গভর্নর
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরি করেছেন ভারতীয় সরকারি ব্যাংক ‘স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’র কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাশ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকেরই এক কর্মকর্তা বিষয়টি জেনেও মধ্যস্থতা করে তাকে ছেড়ে দেন। গত রোববার ঘটনাটি ঘটলেও গভর্নর মঙ্গলবার পত্রিকায় প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পারেন।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে গভর্নর ড. আতিউর রহমান জড়িত ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে ভারতীয় ব্যাংকটির ঢাকা শাখাকে চিঠি পাঠাবেন বলে জানা গেছে। দু’এক দিনের মধ্যেই চিঠি পাঠানো হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাশকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরিচালন নীতি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত রোববার স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার টাকা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ভল্টে আসা কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাশ ৫ লাখ টাকা চুরি করেন। এ টাকা ছিল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। প্রথম অবস্থায় অস্বীকার করলেও পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাকে ধরা হয়। পরে অবশ্য তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহার মধ্যস্থতায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, গভর্নর জানার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা, নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামান, শুভংকর সাহা ও মতিঝিল অফিসের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার। এসব উর্ধ্বতন কর্মকর্তা চুরির ঘটনা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ভল্ট এলাকায় কোনো প্রকার নিরাপত্তার অভাব রয়েছে কি না সেটাও দেখবেন। টাকা চুরি করার সময় কেউ দায়িত্বে অবহেলা করেছে কি না তাও দেখতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যাতে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দু’এক দিনের মধ্যেই স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে চিঠি দিচ্ছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে যাতে তারা সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়।’
এদিকে ভল্ট এলাকা থেকে টাকা চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার গভর্নর এই বিষয় নিয়ে তিনটি মিটিং করেছেন। তবে ঘটনাটি রোববার ঘটলেও গভর্নর এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। মঙ্গলবার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখে তিনি জানেন। এত বড় ঘটনা তাকে কেন জানানো হয়নি সে বিষয় নিয়েও গভর্নর ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ভল্ট এলাকায় ইতিমধ্যে নিরাপত্তা বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভল্ট এলাকায় প্রবেশের সময় বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঢোকার নিয়ম। যে কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাই হোক না কেন, এই জায়গায় প্রবেশ করতে গেলে সারা শরীর তল্লাশি করা হয়। আবার বেরোনোর সময়ও তাকে একইভাবে তল্লাশি করা হয়। তবে টাকা নিতে আসা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা পকেটে করে ৫ লাখ টাকা নিয়ে গেলেও তা কেন নিরাপত্তাকর্মীদের নজরে আসেনি তা ভল্টের নিরাপত্তায় একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা শুভঙ্কর সাহার মধ্যস্থতায় দীপক চন্দ্র দাশকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টিও অনেকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না।