adv
২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সোমবার কিংবা মঙ্গলবার রাতে ফাঁসি কার্যকর

kamzamanনাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মোহম্মদ কামার“জ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হতে পারে আগামী সোমবার দিবাগত রাতে। না হলে মঙ্গলবার রাতে। এরইমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষকে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য সব ধরনের প্র¯‘তি নিতে বলা হয়েছে। আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেন, কামার“জ্জমানের ফাঁিসর আদেশ কার্যকর করার প্র¯‘তির নির্দেশ দিয়েছি । আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য এই নির্দেশ দেন।
আইন মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেন, জেলকোড না মানলেও তো তাকে একটা রিজনেবল টাইম দিতে হবে। কারণ ৪৯ অনু”েছদে তার একটি অধিকার আছে রাষ্ট্রপতির কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া। কামার“জ্জামান আপিলের রায় দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে ক্ষমা ও প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। যদি তা চান তাহলে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি তা না চান তাহলে সাতদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরবর্তী যে কোনও সময়ে কামার“জ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। বুধবার সন্ধ্যায় তার গুলশানের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি এই সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ও সাংবাদকিদের বিভিন্ন  প্রশ্নের জবাব দেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, কামার“জ্জামানকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে যে তিনি যে আপীল করেছিলেন তা তার পক্ষে যায়নি। রাষ্ট্রপক্ষে গেছে। এই কারণে তার ফাঁিসর আদেশ বহাল আছে। তার ফাঁিসর আদেশ কার্যকর করা হবে সেটাও তাকে জানানো হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ সেটা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাকে এটাও জানানো হয়েছে তিনি চাইলে তার প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেন রাষ্ট্রপতির কাছে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কামার“জ্জামান অপরাধ স্বীকার করে ও আদালতের রায় মেনে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত কারা কর্তৃপক্ষকে জানাননি। তার আইনজীবীরা মনে করছেন, তাকে প্রাণ ভিক্ষার জন্য যে সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে ওই সময় তিনি নিতে চান। শেষ দিনেই জানাতে চান তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন না। আর তিনি সেটা জানালেই কারা কর্তৃপক্ষ তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে পারবে।
এডভোকেট আনিসুল হক বলেন, এই মামলায় কামার“জ্জামানের পক্ষের আইনজীবীরা রিভিউ করার কথা বলেছিলেন রায়ের পর পর। বাস্তবতা হ”েছ এই মামলার রায়ের বির“দ্ধে রিভিউ করার কোন সুযোগ নেই। সেটার কোন বিধানও নেই। তারা নানা কথা বলেই সেটা করবেন বলেন। কিš‘ সেটা তারা পাবেন না। পাওয়ার মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটি পাবেন। আর এই কারণে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কামার“জ্জামানকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে কামার“জ্জামান নিজের দোষ স্বীকার করে মাফ চেয়ে রাষ্টপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে সাত দিন পর তার সাজা কার্যকর করা হবে। আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজের বিষয়টি নজির হিসেবে তুলে ধরে মন্ত্রী বলছেন, জামায়াতের এই নেতার দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে আইনি কোনও বাধা নেই।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমার এখতিয়ারে যেটি আছে তা আমি আপনাদেরকে পরিস্কার করে বলতে পারি। কিš‘ যেটি আমার এখতিয়ার বহিঃর্ভূত সে কথাতো আমি বলতে পারি না। আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন রায়ের কপি কবে পাবে তা আমি জানি না।
তিনি বলেন, এমন কিছু করা হবে না যা আইনানুগ নয়। এখন পর্যন্ত এ রায়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় হয়নি। কিন্ত এখন পর্যন্ত আপিল বিভাগের একটি রায় আছে যেখানে রিভিউ এর পিটিশন ডিসমিস্ট হয়েছে। আমাকে সেইটা ধরে নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে তাদের প্র¯‘তির ব্যাপারে আদেশ দিতে হবে। আমি সেই আদেশ দিয়েছি।
আইসিটি অ্যাক্টে আরো কিছু সংশোধন আনা হবে। সেজন্য হয়তো আর ক’একটি দিন দেরি হবে। আইনমন্ত্রী বলেন, আমি যতটুকু জানি কামার“জ্জামানকে জানানো হয়েছে যে তার আপিল খারিজ হয়েছে এবং তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হ”েছ। তিনি আরো বলেন, আমি প্রায় ছয় মাস আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ সকলকে বলেছিলাম, যুদ্ধাপরাধী মানবতা বিরোধীদের সর্বো”চ শাস্তি ফাঁসি আছে এই ব্যাপারে আমরা কারো সঙ্গে কোনো আপোষ করতে রাজি নয়।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর তা পর্যালোচনায় আবেদন জানানোর কথা জামায়াত নেতার আইনজীবীরা বললেও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এডভোকেট মাহবুবে আলম বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্যও অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
এর আগে কাদের মোল্লার সর্বো”চ আদালতের আপীল বিভাগে ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর তার তরফ থেকেও তার কৌশুলীরা আদালতের কাছে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছিলেন। কিš‘ ওই সময়ে আদালত তার রিভিউ পিটিশন গৃহীত হয়নি। এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে  আনিসুল হক বলেন, আপলি বিভাগ কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে রিভিউ গ্রহণ করেননি। ওই সময়ে আপিল বিভাগ তার রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়েছিলেন। এটাকে একটা নজির হিসেবে আমরা দেখছি।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, কামার“জ্জামানের  রায় কার্যকর করার পদক্ষেপ শুর“ করার জন্য ইতোমধ্যে জেল কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। যেই মুহুর্ত থেকে কামার“জ্জামান ফাঁসির আদেশ শুনেছেন সেই মুহুর্ত থেকে দিন গণনা শুর“ হবে বলেও জানান তিনি। সেই হিসাবে গত সোমবার সবো”র্চ আদালতের আপীল বিভাগে তার ফাঁিসর দন্ডাদেশ দিয়েছে। আগামী সোমবার সাতদিন হবে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও তার ফাঁিসর আদেশ দেন।
আইনমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা সাতদিন সময় দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায় কার্যকর করার জন্য সংবিধানে কোনো সময় দেয়া নেই। তা না থাকলেও একটা রিজনেবল সময় দেয়া দরকার। সেই  সময়টা সরকার দিতে চাইছে। ওই সময়টা জেল কোড অনুযায়ী সাত দিন হতে পারে।
এদিকে গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গুজব ছড়াতে থাকে যে কামার“জ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে রাতেই। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে যখন আইজি প্রিজন দেখা করতে যান এবং তারা র“দ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তখন তা আরো বাড়তে থাকে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেখা করতে আসেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বুধবার দুপুর ১২টায়।  সোয়া ১২টা পর্যন্ত র“দ্ধদ্বার বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী ও আইজি প্রিজন। এর পরই আইনমন্ত্রী বেরিয়ে যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তার কার্যালয়ে যান।
বুধবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে আইনমন্ত্রী গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেখা করার পর বিষয়টি অনেকেই নিশ্চত হয়ে যান। তার উপর সকালে কামার“জ্জমানের পরিবারেরর সদস্যরাও তার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে আসেন। সব মিলিয়ে কৌতুহল বাড়তে থাকে। তবে আইনমন্ত্রী সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে যখন তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে, কেন সময় দেওয়া হয়েছে এরও ব্যাখ্যা করেন তখন গুজবের রেশ কমতে থাকে। আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইনমন্ত্রীর দেখা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কামার“জ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করার বিষয়েই আলোচনা করা ছাড়াও আরো কিছু গুর“ত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।
এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামার“জ্জাামানের ফাঁসির রায় রিভিউ পিটিশনের আগে কার্যকর না করার আহ্বান জানান কামার“জ্জামানের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
দুপুরে এক সাংবাদিকদের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেছেন, জামায়াত নেতা কামার“জ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। সরকার যখন চাইবে তখনই ফাঁসি কার্যকর করতে পারবে। এ মামলায় আপিলের চূড়ান্ত রায়ের বির“দ্ধে রিভিউ করার সুযোগ নেই। কারাগারের বিধান অনুযায়ী রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য আসামি সাত দিন সময় পান।  কামার“জ্জামান সে সুযোগ পাবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তা কামার“জ্জামান পাবেন না। তিনি এটা বললেও পরে দেখা গেছে সরকারের তরফ তেকে তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য,কামারুজ্জামান এখন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সোমবার জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামার“জ্জামানের আপিলের চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর আগে, গত বছরের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বুধবার সকালে কামার“জ্জামানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করতে যান। তবে দেখা করে বেরিয়ে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইমাম সাংবাদিকদের বলেন,  বাবা সুস্থ আছেন। ভাল আছেন ও স্বাভাবিক আছেন। এটাকে শেষ দেখা ভাবছেন না তারা।

 

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া