adv
২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বংশীবাদক এখন লতিফ সিদ্দিকী

3438_1মিনার রশীদ: লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পাগলের বংশধর বলে অভিহিত করেছেন। সিলেট বিমানবন্দরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপকালেও লতিফ সিদ্দিকীকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেছেন, এ পরিবারের সবাই নিয়ন্ত্রণহীন।
একজন ব্যক্তির অপরাধে পুরো বংশকে কেন খোঁচা মারা হলো তা সহজেই অনুমেয়। এই ধরনের খোঁচা-শিল্পে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে আসলেই অনন্যা তা আবারও প্রমাণ করলেন। যাকে খোঁচা মারেন শুধু তিনিই নন, তাঁর চৌদ্ধ গোষ্ঠি চৌদ্দ শ বছর ধরে এই খোঁচা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করবেন।
কাজেই কপাল আর কাহাকে বলে ? লতিফ সিদ্দিকী গালি খেলেন ভরাপেটে। আর কাদের সিদ্দিকী খেলেন নেহায়েত খালি পেটে।
মাত্র দুদিন আগে ( বোনের জন্মদিন ২৮শে সেপ্টেম্বরে ) বোনের কিছু পুরনো চিঠি প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধুর চতুর্থ পুত্র হিসাবে খ্যাত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী । সবারই জানা আছে যে এই ভাই বোনের মাঝে কিছুটা মান অভিমান চলছিল । বোনকে খুশী করার নিমিত্ত্বে বা বরফ গলানোর নিমিত্তে সেন্টিমেন্টাল একটা প্রচেষ্টা গত লেখাটিতে লক্ষ্য করা গেছে। এই সেন্টিমেন্টাল বুলেটটি এবারও বোধ হয় মিসফায়ার হয়েছে।
দিল্লির পরামর্শে এই অবৈধ সরকারকে বৈধতা দিতে গিয়ে কিছুদিন আগে উপনির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী ‘ম্যাংগো আর গানিব্যাগ’ দুটোই হারিয়েছিলেন । প্রধানমন্ত্রীর এই খোঁচার পর এখন কী হারালেন সেই হিসাবটি টানতেও বেশ খানেকটা সময় লাগবে। পিতার সাথে পুত্রের হিসাবটিও নতুন করে মিলাতে হতে পারে।
পুরো বংশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলেও এই পাগলকে পর পর দুইবার মন্ত্রী সভায় ¯’ান  দেয়া হয়েছে। বরং এই ধরনের পাপ বার বার ছওয়াবে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে । এই পাগলকে এতদিন সর্বো”চ প্রটোকল দিয়ে লালন পালন ও প্রশ্রয়ের পাপ নয়, তাকে বহিস্কারের ছওয়াব দিয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে বশংবদ মিডিয়া ও চামচাকুল।
অথচ এই পাগল বা পান্ডাকে জাতির ঘাড়ে চাপানোর জন্যে সরাসরি দায়ী কে ? ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে পান্ডাতন্ত্র বা গুন্ডাতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে কি ! এই গুন্ডাতন্ত্রের সুরক্ষার জন্যেই এই পান্ডাদের দরকার। হরতালকারীদের ঘরে ঘরে গিয়ে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন দেড় বিলিয়ন মুসলিমের মনে আঘাতদানকারী এই পান্ডা। প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে ডঃ ইউনুসকে কারাগারে পাঠাতেন বলে জানিয়েছিলেন সেই একই পান্ডা।
টাঙ্গাইলে নিজ বাড়িতে পিডিবির উপসহকারী প্রকৌশলী পুনয় চন্দ্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন এই পান্ডা!
এর কিছুদিন পরেই গাজীপুরের হাইটেক পার্কের উপসহকারী প্রকৌশলীকে অভিনব শাস্তি দেন এই সঙ নয়, ষন্ডা । হাইটেক পার্কে প্রবেশের সময় ফোয়ারাটি অপরিষ্কার থাকায় শাস্তি হিসাবে প্রকৌশলীকে পানিতে ফেলে দেন মন্ত্রী নামক এই পান্ডা। পরে ফোয়ারার পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গী সাথী সহ এক ধরনের সেডিষ্ট আনন্দ উপভোগ করেন। কর্তব্য কর্মে অবহেলার জন্যে যে কাউকে যে কোন বিভাগীয় শাস্তি দেয়া যেতে পারে । কিন্তু শাস্তির নামে একজন সম্মানিত প্রকৌশলী তথা একজন মানুষের মানবিক মর্যাদাকে এমনভাবে ভূলুণ্ঠিত করার এই ঔদ্ধত্য দেখে সভ্য সমাজ ক্ষুদ্ধ ও স্তম্ভিত হয়েছে । দেশের মানুষকে এক ধরনের অসহায়ত্ব গ্রাস করেছে, কারন এই ঔদ্ধত্যের জবাব দেয়ার জন্যে যে অবাধ নির্বাচন তাও তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।
গুণধর মন্ত্রীর এতসব কর্ম কি কারো চোখে পড়েনি ? নাকি তার এই সব কর্মে যারা এক ধরনের আনন্দ পেয়েছিলেন তারা কি জবাবদিহীতার বাইরে থাকতে পারেন ?
পাগলের হাতে ক্ষমতা পড়ে গেলে কী ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয় তা আমরা মেরিন একাডেমিতে থাকা অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের ট্রেনিংটা ছিল রেজিমেন্টাল বা সামরিক ধাচের। সিনিয়ররা জুনিয়রদেরকে ইচ্ছে মত র্যাগিং বা শারীরিক শাস্তি দিতে পারতেন। এদের মধ্যে কিছু সিনিয়র ছিলেন সিকি বা সোয়া পাগল, কেউ কেউ ছিলেন হাফ মেড বা অর্ধ পাগল, গুটিকয় ছিলেন পৌণে পাগল, আর দুয়েক জন ছিলেন পুরা পাগল। এদের মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পাগল বা পাগলকূল শিরোমনিটি ছিলেন সম্ভবত আমাদের ইম্মিডিয়েট সিনিয়র । আমাদের কোন ব্যাচমেইট তার সেই কীর্তির কিছু খবর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিল । এটা জানতে পেরে তিনি পুরো নটিকেল ক্লাসের উপর অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন। একটা জগের মধ্যে অনেকগুলি কাঁচা মরিচ ( মখা আলমগীরের জোশে) পানির মধ্য গুলেন। তারপর আমাদের ব্যাচের পুরো নটিক্যাল ক্লাসকে শীতের রাতে সুইমিং পুলে নামিয়ে গোছল করান বা পানিতে চুবান। সেখান থেকে তুলে এনে ক্যাডেট ব্লকের ছাঁদে নিয়ে শুধু আন্ডি পড়িয়ে কনকনে শীতের সেই রাতে সবাইকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। তারপর নিজের হাতে তৈরি সেই মরিচ পানি প্রত্যেকের আন্ডির ভেতরে নিস্পাপ নুনুর মধ্য ঢেলে দেন এবং প্রত্যেককে হাত দিয়ে উপর থেকে ঢলতে হুকুম করেন ! কারও হাত এই হুকুম তামিল না করলে ভয়ংকর হুমকি সহ তেড়ে আসেন। হিটলারের চেহারাও সম্ভবত এমন ভয়ংকর ছিল না। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জুনিয়র ক্যাডেটরা সেদিন তাঁর এই ভয়াবহ শাস্তি থেকে বেঁচে যাই। কিš‘ সতীর্থদের সেই কান্না আজও ভুলতে পারি নি । তিনি যে আসলেই মস্ত বড় পাগল ছিলেন জুনিয়রদের উপর এই মরিচের পানি প্রয়োগের পরই তা কর্তৃপক্ষের অনুভবে আসে । বলতে দ্বিধা নেই যে পাগল নির্ণয়ের এই প্রক্রিয়াটি ছিল সত্যি অনেক ব্যয়বহুল এবং জুনিয়রদের জন্যে চরম বেদনাদায়ক।
মজার ব্যাপার হলো, এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই মরিচের গুড়া বা পিপার স্প্রে প্রয়োগের পরই আমরা টের পাচ্ছি যে আমরা কিছু বদ্ধ উন্মাদ বা পাগল কর্তৃক শাসিত হচ্ছি। ডঃ কামাল সহ অনেকেই উপলব্দি করতে পেরেছেন যে দেশটি আসলে পড়ে গেছে পাগলদের হাতে। এরা পাগল নহে পান্ডা, এদেরকে সঙ মনে হলেও এরা ষন্ডা।
এক যুগ আগে এক বিচারপতি আমাদেরকে সতর্ক করলেও ঠিক সময়ে সাবধান হতে পারি নি। বিচারপতিদের অভিশংসন করার ক্ষমতা অবৈধ সংসদের হাতে দিয়ে এই ধরনের কওশনারী সিগনালের বাতিঘরটিকে জীবনের তরে ভেঙে ফেলা হয়েছে। কাজেই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাগলা গারদ কিংবা সবচেয়ে বড় জেলখানাটির আয়তন হবে এখন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। এটাকে সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানাও বলা যেতে পারে।
আমাদের সেই বদ্ধ উন্মাদ সিনিয়রের মত সেই একই ‘পিপার স্পে’  এদেশের শিক্ষকশ্রেণীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন আরেক পাগলকূল শিরোমণি ও বিল্ডিং নাড়াচড়া তত্ত্বের জনক মখা আলমগীর । আমাদের ব্যাংক থেকে লুট করা চার হাজার কোটি টাকাকে এক পাগল যখন বলছেন ‘ পি নাট ’ তখন মাত্র কয়েক’ শ কোটি টাকা বেতন বাড়ানোর দাবি করার জন্যে অন্য পাগল শিক্ষক সমাজের উপর নিক্ষেপ করছেন পিপার স্প্রে বা মরিচ মিশ্রিত পচা পানি।
এই সব সকল মরিচের পানি এবং জঙ্গিবাদের পানি বা অপবাদ ছুড়ার জবাব জনগণ একদিন অবশ্যি অবশ্যি দিবে। স্বভাবে পান্ডা এবং জাতে পাগল হলেও মনে হচ্ছে এই লতিফ তালে একদম ঠিক আছেন। মনে হচ্ছে সতীর্থদের মধ্যে সেই সবচেয়ে স্মার্ট। জনগণের এই এন্টিপিপার অবস্থার উত্তাপ সবার আগে টের পেয়েছেন তিনি । কাজেই মোক্ষম সময়ে সবকিছু গুছিয়ে স্বপক্ষ ত্যাগ করেছেন। সমস্ত পরিবারকে নিরাপদে বাইরে নিয়ে তিনি এই কথা কয়টি উচ্চারণ করেছেন।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। আওয়ামী লীগের বির“দ্ধে অব¯’ান নেয়ায় যে লতিফ সিদ্দিকী নিজের সহোদরকে বিভিন্ন সময়ে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন, নাসিম-তোফায়েলের মত নেতাদেরও আওয়ামীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেই লতিফের স্বপক্ষ ত্যাগ অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে। যে টেলিকম সেক্টররের লুটপাট নিয় প্রশ্ন তোলায় মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশের আজ এই অবস্থা সেই একই কথা আজ লতিফের মুখ থেকে বের হচ্ছে !!
এটা যেন সেই কানকাটা রাজার গল্প স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে । রাজ নাপিতগণ রাজার কাটা কানের খবর ছড়িয়ে দিতে পারে এই ভয়ে রাজক্ষৌরকর্মের পর সব নাপিতকে মাটিতে জীবন্ত পুতে ফেলা হতো। একদিন সেই মাটির উপরে সুন্দর বাঁশ গাছ জন্মায়। রাজবংশীবাদক সেই বাঁশ কেটে বাঁশি বানায়। সেই বাঁশি থেকে এমন সুন্দর সুর বের হয় যে রাজ প্রাসাদের সবাই বিমোহিত হয়ে পড়ে। রাজা খুশী হয়ে সেই জায়গার সকল বাঁশ কেটে বাঁশি বানিয়ে রাজ্যময় ছড়িয়ে দেয়। রাজা ফরমান জারি করেন যে রাজার সামনের জন্মদিনে সবাই একযোগে অনিন্দ সুরের সেই বাঁশি গুলি বাজানো শুরু করবে ।
রাজার ঘোষণামত রাত বারোটা এক মিনিটে সব বাঁশি একযোগে বেজে উঠলো। সবগুলো বাঁশি থেকেই বের হচ্ছে একটি বিশেষ সুর, শুনুন গো রাজ্যবাসী, রাজার এক কান কাঁটা। সেই খবর ঢেকে রাখতে আমাদের সকল নাপিতকে মেরে মাটিতে পুতে রেখেছে। টেলিকম সেক্টরের বংশীবাদক এখন লতিফ সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান নহে।
ঈষত সম্পাদিত, অন্যদিগন্ত থেকে নেয়া

 

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া