adv
১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে ৫টি ভুলের দায় বিএনপিকে নিতেই হবে

1389007374গোলাম মাওলা রনি : ইদানিং যে আমার কি হয়েছে তা বুঝতেই পারছি না। রাজ্যের সব অপ্রয়োজনীয় চিন্তা মাথায় ঘুর পাক খায় দিবানিশি-সবসময়। চিন্তা করতে করতে মাথার বুদ্ধি পেটেও চলে আসে। ফলে আমার ঢোলের মতো পেটটি ফুলে আরো বড় আকার ধারন করে। ছোটকাল থেকে এমনিতে ঢোল আমার খুব পছন্দ। আরো পছন্দ ঢুলিদেরকে। ছোট বেলায় দেখতাম ধুতি পরিহিত ঢুলীরা লাফিয়ে লাফিয়ে ঢোলে বাড়ি মারতো আর লাফের চোটে প্রায়ই ধুতি মুতি অসংলগ্ন হয়ে পড়তো। এই দৃশ্য দেখে পোলাপানরা খুব মজা পেতো আর কুল বধুরা লজ্জায় ছি ছি করতো। 
আমার মাথায় প্রশ্ন জাগতো- আুমণা এত্তোবড় ঢোল! এর ভেতর না জানি কত্তোসব যন্ত্রপাতি লুকানো আছে। বড় হয়ে জানলাম-ঢোল এমনিতেই শব্দ করে-ভেতরটা একদম ফাঁকা-কিছু নেই। এরপর প্রবাদে পড়লাম-খালি কলসি বাজে বেশী।
প্রায়ই আমার নিজেকে বড়জোর একটি নাদুস নুদুস ঢোল বলে মনে হয়। আবার মন যখন খারাপ হয় তখন খালি কলসির সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে এক অনাবিল প্রশান্তি অনুভব করি। আধুনিক কালে আমিই বোধ হয় সেই অর্বাচীন নির্বোধ যে কিনা নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করে। আজ আমার এতো কথা মনে করার কারন হলো এদেশের প্রধান বিরোধী দল অর্থাত বিএনপির ভুল নিয়ে লিখতে বসেছি। সঙ্গত কারনে আমার বিএনপি দলীয় বন্ধুরা টিটকারী মেরে বলতে পারো-দেখো ঢোলের তামসা দেখো নিজ দলের ভুল ধরতে গিয়ে ফুটো হয়ে ফটাস মেরে এখন আমাদেরকে নিয়ে গবেষনা করতে এয়েছেন। আমার বন্ধুরা যতই সমালোচনা করুক না কেনো- আমি আমার আরাধ্য কাজটি করেই যাবো। কারন আমি যে ঢোল। 
আমার ভেতরে যেমন জড়তা নেই তেমনি বাইরেও নেই। নেই কোন লোভ লালসা, পদ পদবী পাবার আকাংখা কিংবা মনোনয়ন প্রাপ্তির কোন দুরাশা। আমি সব সময় সব কিছু বলে যাবো কারন আমি চোখের সামনে দেখছি দলটি ভুল করছে। তাদের একের পর এক ভুল যে কেবল তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা নয়- ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সবাইকে, পুরো জাতিকে। তাদের দূর্বলতা মানে গনতন্ত্রের দূর্বলতা আর তাদের ধ্বংশ মানে গনতন্ত্রের ধ্বংশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক কালে যে হতাশা, নৈরাজ্য এবং নিস্তব্দতা বিরাজ করছে তার দায় বিএনপি কিছুতেই এড়াতে পারবে না। অথচ প্রথম দিন থেকেই যদি তারা একের পর এক ভুল না করতো তবে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। বিএনপির অসংখ্য ভুলের মধ্যে আমার দৃষ্টিতে ৫টি রাজনৈতিক ভুল নিয়ে আজ আলোচনা করবো।
এক. বিএনপি এখন পর্যন্ত তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঠিক করতে পারেনি। তারা হয়তো আওয়ামীলীগকে প্রতিপক্ষ মনে করে। আবার কেউবা করে ঘৃনা। অনেকে চায় আওয়ামীলীগের পতন হউক। কিš‘ কিভাবে সেটা সম্ভব তা কিš‘ কেউ ভেবে দেখছে না। তারা যদি আওয়ামীলীগকে প্রতিপক্ষ মনে করতো তবে আওয়ামীলীগের যা যা সম্পত্তি রয়েছে তারা তার চেয়ে বেশি অর্জন করতে চাইতো যেমনি চেয়েছিলেন প্রেসিন্টে জিয়াউর রহমান। এই বিষয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডাঃ বি চৌধুরীর সঙ্গে আমার প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপি অন্তরঙ্গ আলাপ হলো দিন কয়েক আগে র‌্যাডিসন হোটেলে। তিনি বললেন জিয়াউর রহমানের দুরদৃষ্টি এবং অন্তর্দৃষ্টি সম্পর্কে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই পেলেন এমন একটি আওয়ামীলীগ যা কিনা তৎকালীন সময়ে আজকের জাতীয় পার্টি বা জামাতের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিলো। তিনি কিন্তু তৃপ্তির ঢেকুর তোলেননি। বরং ধারনা করেছিলেন যেহেতু দলটির তৃনমুল সংগঠিত এবং সেখানে যথেষ্ঠ জনপ্রিয়তার ভিত্তি রয়েছে কাজেই একদিন না একদিন আওয়ামীলীগ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
এজন্য তিনি বিএনপিকে ব্যাপকভাবে তৃনমুলে নিয়ে যেতে চাইলেন। তিনি এক বছরের মধ্যে সেই কাজ করতে চাইলেন যা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধু ৫০ এর দশকে ৭ বছর ধরে করেছেন। তারা হিসাব করে বের করলেন যে ৭ বছরে আওয়ামীলীগ নেতারা কতটি জনসভা এবং কর্মীসভা করতে পারেন। তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন আগামী এক বছরে দৈনিক কয়টি জনসভা করতে হবে। এভাবে জিয়াউর রহমান ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং এমন দিনও গেছে যেদিন ৪/৫টি জনসভা করা হয়েছে। জলে স্থলে এবং অন্তরীক্ষে ভর করে তিনি দিবানিশি কাজ করেছেন। ফলে বিএনপি দাড়িয়ে গেলো একটা ভিত্তির ওপর।
বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে ৯টি ওয়ার্ড। প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে আওয়ামীলীগের একটি ৫৯ সদস্যের পূর্নাঙ্গ কার্যকরী কমিটি। এর বাইরে প্রতি ওয়ার্ডে অন্তত দেড় দুইশ লোক রয়েছে যারা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে দল করেন। দলের যে কোন কর্মসূচীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে আওয়ামীলীগের সক্রিয় নেতা কর্মী রয়েছে প্রায় দুই হাজার জন। এরাই মিছিল, মিটিং, মারামারি, কাটাকাটি করে প্রতিপক্ষের বির“দ্ধে। এরাই দল বেঁধে উপজেলায় যায়, জেলায় যায় এবং দরকার হলে ঢাকায় আসে। বিএনপি যদি দল হিসেবে আওয়ামীলীগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তবে তৃনমূলে তারও থাকতে হবে অনুর“প বা তার চেয়েও শক্তিশালী কিছু। প্রতিষ্ঠার পর থেকে একমাত্র জিয়াউর রহমান সাহেবই তৃনমুলের যতটুকু সম্ভব ততটুকু ভীত গড়ে দিয়েছিলেন। তারেক রহমান একবার শুধু সেই কাজটি পুনরায় শুরু করেছিলেন মাত্র। তারপর বিএনপি নেতৃবৃন্দ ঢাকায় বসে ফুসফাস ছাড়া তেমন কিছুই করেনি। বিএনপি যদি তাদের এই ভুলটির দিকে না তাকায় তবে আগামী দিনে পরিস্থিতি হবে আরো ভয়াবহ।

দুই. বিএনপির প্রধান সিপাহসালার বা সেনাপতি কে। দলীয় সভানেত্রীকে আমার সম্রাজ্ঞী বলেই মনে হয়। কিন্তু তার পক্ষে মাঠে ময়দানে, রাত বিরাতে গোপনে এবং প্রকাশ্যে-কোন লোকটি দায়িত্ব নিয়ে সব কাজ করবেন-এমন কাউকে আমি বিএনপিতে এখন দেখছি না। যারা আছেন তারা সবাই র“টিন ওয়ার্ক করছেন-হয়তো আদিষ্ট হয়ে, নয়তো চাপে পড়ে বা বাধ্য হয়ে । অন্যদিকে ১৯৮৬-৮৭ সাল থেকে আজ অবধি শেখ হাসিনাই আওয়ামীলীগের সম্রাজ্ঞী এবং একই সঙ্গে প্রধান সেনাপতি। তিনি তার দলের শুভানুধ্যায়ী সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আমলা, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবি, অধ্যাপক, ছাত্র নেতা, যুবনেতা, সহযোগী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কারনে অকারনে সরাসরি যোগাযোগ করেন। কেউ তার জন্য করলে তিনি ফোন করে ধন্যবাদ দেন। আবার অন্যায় করলে ভৎসনা করেন। সময় পেলে তিনি কখনো গোপনে আবার কখনো প্রকাশ্যে তার লোকজনকে নিয়ে পারিবারিক পরিবেশে খাওয়া দাওয়া সহ বৈঠক করেন। এতে করে তার লোকজন নিজেদের মধ্যে শত বিরোধ এবং হানাহানি সত্বেও দল ও নেত্রীর প্রয়োজনে ঝাপিয়ে পড়েন এবং সবাই এক সুরে কথা বলেন।
এখন আমি যদি প্রশ্ন করি গত এক বছরে বিএনপি পš’ী সাংবাদিক, উকিল, শিক্ষক, ছাত্রনেতা, দলীয় নেতা, পেশাজীবি, ব্যবসায়ী, আমলা, কবি, সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবিগন কতবার ও কার নিকট থেকে একান্তে একটি ফোন পেয়েছেন কিংবা কোন নেতার দাওয়াতে এক টেবিলে বসে সেই নেতার বাড়ীতে বসে দুমুঠো ডাল ভাত খেয়েছেন ? আমার বিশ্বাস বুকে হাত দিয়ে প্রকাশ্যে বিএনপির কেউ আমার কথার জবাব দিতে পারবেন না । আসলে জবাব দেয়ার দরকারও নেই। কেবল নিজেকে নিজে প্রশ্ন কর“ন-আপনাদের প্রতিদ্বন্দীরা যদি এমনটি করেন তবে তারা কি খুব মন্দ কাজ করেছেন। যদি তা না হয় এবং আপনি যদি কাজটিকে ভালো মনে করেন তবে আজ অবধি ওপথে পা বাড়াননি কেনো?
রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতি সদা পরিবর্তন এবং বিবর্তনশীল একটি বিষয়। যুদ্ধের ময়দানে যেভাবে ক্ষনে ক্ষনে নীতি-আদর্শ পরিকল্পনা এবং আক্রমনের পদ্ধতি পাল্টাতে হয় তেমনি রাজনীতির ময়দানেও প্রতি মুহুর্তে আপনার গতি পরিবর্তন করা লাগতে পারে। আর এজন্য দরকার বিশাল সংখ্যার এক অনুগত কর্মী বাহিনী। যারা আপনাকে কোন প্রশ্নতো করবেই না বরং আপনার ক্ষনে ক্ষনে পরিবর্তিত মতামতের সঙ্গে কন্ঠ মিলাবে। আপনি জয় লাভ করলে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়বে গনিমতের মাল লুট করার জন্য। আর আপনার পতন হলে আপন ার সঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে বা হাসতে হাসতে সহ মরনে চলে যাবে। এসব কর্মীবাহিনীর শরীরে যদি আপনার হাতের স্পর্শ না থাকে। তাদের পেটে যদি আপনার অন্ন না থাকে তবে তারা কোন দিনই আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল এবং মর্মব্যথী হবে না। এখন একবার ভাবুনতো-আপনি আপনার প্রতিপক্ষের সেনাপতিকে পর্যদস্ত করার জন্য কতটুকু প্র¯ত্ততি নিয়েছেন! অপর পক্ষের যা আছে আপনার কি তা আছে?

তিন. বিএনপি প্রথম থেকেই ৯বম সংসদকে ভালো ভাবে নেয়নি। তারা মনে করে ১/১১ র কুশীলবদের সঙ্গে আতাত করেই আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসেছে। তারা এও মনে করে যে, তাদের উচিত হয়নি ৯ বম সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগনের অনেকেই বিএনপির এ ধারনার সঙ্গে একমত হবেন। কিন্তু তারা এ কথাও বলবেন ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচন বর্জনের যে দৃঢ় সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে তা মূলত নেয়া উচিত ছিলো ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর। কিন্তু যেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহন এবং কলঙ্কজনক পরাজয় তারা ফেরাতে পারেনি সেহেতু তাদের উচিত ছিলো বাড়াবাড়ি না করে পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফের মতো ধীরে সুস্থে এগুনো ১/১১ র কুশিলবরা তো প্রথমে আওয়ামীলীগ বাদ দিয়ে বিএনপির সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিলো। কিন্তু বিএনপি সেই তুরুপের তাসটি খেলতে পারেনি দক্ষতার সঙ্গে যা তাদের প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ খেলেছে সফলতার সঙ্গে। বিএনপি পারতো ৯বম সংসদের ভেতরে এবং বাইরে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করে বর্তমান সময়ের মতো ধীরে চলো নীতিতে এগুতে।
বিএনপি যদি তার অল্প কয়জন সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে সক্রীয় থাকতো এবং কূটনীতিতে পারদর্শীতা দেখাতে পারতো তবে আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি এতো লাইম লাইটে আনতে পারতো না। আমার মনে হয় আওয়ামীলীগ পঞ্চদশ সংশোধোনীতে যাবার সাহস পেতোনা। অন্যদিকে বিএনপি যদি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে পঞ্চদশ সংশোধনী মেনে নিতো এবং প্রথম থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতো তবে আওয়ামীলীগের গো হারা কেউ ঠেকাতে পারতো না। সুদীর্ঘ ৬৫ বছরের ইতিহাসে গত ৬টি বছর নিয়তি আওয়ামীলীগকে সাহায্য করে আসছে। কিন্তু ইতিপুর্বের ইতিহাস হলো-আওয়ামীলীগ প্রতিপক্ষের জন্য যে গর্ত খুড়েছিলো সেই গর্তে পড়ে তাদেরকেই আত্মাহুতি দিতে হয়েছে। ২০০৮ সালের এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে ও একই পরিনতি হতো। আওয়ামীলীগ জিতেছে বিএনপির ভুলের জন্য।
বিএনপির বড় ব্যর্থতা সংসদে যথা সময়ে একজন বিরোধী দলীয় উপনেতা নিয়োগ দিতে না পারা। ফলে দর্ঘিদিনের মওদুদ-সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরোধে দলটি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিরতরে হারায়। অথচ যথা সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে দুই জনই টিকে যেতেন যা দলের জন্য হতো সর্বোত্তম। এর বাইরে আরো ভুল আছে। তারা সম্মেলন ডেকে একজন যোগ্য লোককে মহাসচিব বানাতে পারতো। বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত তাকে কোন অব¯’াতেই ডাঃ বি, চৌধুরী, কে.এম ওবায়দুর রহমান, আব্দুস সালাম তালুকদার, মান্নান ভুইয়া কিংবা খোন্দকার দেলোয়ারের সম পর্যায়ের নেতা বলা যাবে না।
তিনি হয়তো মানুষ হিসেবে অতীতের সকল মহা সচিবের তুলনায় ভালো। এতো ভালো মানুষ যদি কারো মামা, খালু কিংবা ভগ্নিপতি হন তবে সংসারে শান্তি বিরাজ করবে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে ওসব চলে না। অতীতের মহাসচিবগন যে প্রতিহিংসা মোকাবেলা করেছেন বর্তমানের পরি¯ি’তি তার চেয়ে করুন। ফলে বর্তমানে দরকার আরো দক্ষ, আরো সাহসী এবং আরো বর্নাঢ্য রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন ব্যক্তিত্বকে।

চার. পররাষ্ট্র নীতিতেও ছিলো ভ্রান্ত সব উদ্যোগ। তারা তাদের কর্মশক্তি আন্দাজ করতে পারেনি তেমনি পারেনি ভূ-তাত্ত্বিক রাজনীতিতে জনগনের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা করতে। ভারত আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে কিছুই করার ক্ষমতা রাখেনা যতদিন না তারা বাংলাদেশের বির“দ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা না করবে। ভারত যদি বাংলাদেশের বির“দ্ধে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ দেশে সৈন্য সমাবেশ করে তবে দেশটি ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। কাশ্মীর, পাঞ্জাব স্বাধীন হয়ে যাবে। বাংলাদেশ লাগোয়া ৭টি রাজ্য সহ তামিলনাড়-, উত্তর প্রদেশ, সিয়াচেন, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ বি”িছন্ন হয়ে যাবে। ভারতের রাজনীতির একজন শিশুও এই নিমর্ম সত্য অনুধাবন করলেও বিএনপি করেনি। ফলে তারা একবার ভারত গেলো সদল বলে তাদের মান ভাঙ্গানোর জন্য। কিš‘ কিছুদিন পর তাদের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ থেকে অপমান করে দিলো। আবার সেই সেদশেরই নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য সীমাহীন সৌজন্যতা দেখালো। একটি বিষয় গভীর ভাবে ভাবতে হবে-ভারত যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে গায়ে কাদা লাগিয়ে কিছু করতো তবে ১৯৭৫ সালের ১৬ ই আগস্ট ঢাকা শহরে ভারতের বিমান বাহিনীর আক্রমন হতো। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যদি পারতো তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিতো।
পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে যদি আওয়ামীলীগের দিকে তাকান তবে দেখবেন তারা কাউকেই পাত্তা দিচ্ছে না। আপনি শুনে অবাক হবেন-জননেত্রী ভারতকে পাত্তা দিচ্ছেন সবচেয়ে কম। আপনারা যদি ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস বা দিল্লীর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগনের সঙ্গে খুবই আন্তরিক হন তবে একান্তে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন-প্রকৃত ঘটনা কি। আপনারা সব কিছু শুনে অবাক না হয়ে পারবেন না। আওয়ামীলীগ কৌশলে সারা পৃথিবীকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে- ভারতের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক হরিহর আত্মার। কোন বিকল্প না থাকায় সামাজিকতার কারনে তাদেরকে অর্থাৎ ভারতকে সবকিছু মেনে নিতে হচ্ছে। আর এখানেই মারাত্মক হিসাবের ভুল করেছে বিএনপি। একই ভাবে পশ্চিমা বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের প্রতি নির্ভরতাও দলটিকে বিভ্রান্ত করেছে।
আমার বলতে দ্বিধা নেই যে বাংলাদেশে কর্মরত প্রায় সকল রাষ্ট্রদূতগনের সঙ্গেই বহুবার বহু ঘরোয়া অনুষ্ঠানে একান্তে মত বিনিময় করার সুযোগ আমার হয়েছে। আমি অন্তরঙ্গ আলাপে তাদের কর্মপরিধি, দূতাবাস চালানোর জন্য তাদের বাৎসরিক বাজেটের খাত উপখাত, তাদের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তাদের অবস্থান ইত্যাদি ভালোভাবে জানার চেষ্টা করেছি। আপনি শুনে অবাক হবেন-একমাত্র জাপান ছাড়া অন্যকোন দেশই বাংলাদেশে তাদের দূতাবাসকে এশিয়ার জন্য গুরুত্বপুর্ন মনে করেনা। আমি এক মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে চিনি যিনি এক সময়ে বাংলাদেশে খুবই আলোচিত ছিলেন। তিনি একবার ওয়াশিংটনে আমাদের একজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন ভাঙ্গা চোরা ১৯৭০ মডেলের একটি ভক্স ওয়াগন গাড়ী নিয়ে। রাষ্ট্রদূত জানালেন-তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে ডাউন টাউনে একর“মের স্টুডিও এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া এবং পুরোনো ভক্স ওয়াগনের চেয়ে ভালো গাড়ী চালানো সম্ভব নয়। তাহলে বুঝুন-আপনি কাকে কি ভাবছেন এবং তদানুযায়ী কি করছেন!

পাঁচ ঃ সারাদেশের বিএনপি এবং ২০ দলীয় নেতাকর্মীরা ভেবে কুল কিনারা করতে পারছে না কেনোইবা হঠাৎ করে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের পর আন্দোলন বন্ধ করে দেয়া হলো। সবাই বলছে আন্দোলন বন্ধের ঘোষনা হটকারী। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই আন্দোলন বন্ধ করে মূলত নেতা কর্মীদের সঙ্গে বেইমানী করা হয়েছে। যে শত শত মানুষ মারা গেলো, কিংবা যে হাজার হাজার মানুষ নির্যাতিত হলো অথবা জেলে গেলো তাদের নিকট দলীয় জবাবদিহীতা কি? কেউ কি আজ অবধি ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব লোকজনের তালিকা করেছে? তাদের কি দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরন কিংবা আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে? দলের কোন প্রথম শ্রেনীর দায়িত্বশীল নেতা কি ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ীতে দেখতে গিয়েছিলো ? ফলে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে দলীয় নেতা কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহন আপনি কিভাবে আশা করেন?
বিএনপির লোকজন মনে করে ৫ই জানুয়ারীর পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ২/১ দিনের ঘটনাবলীর ওপর না সরকার আর না বিএনপির নিয়ন্ত্রন ছিলো। সারা দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। বেশীর ভাগ এলাকার প্রশাসন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতা করে টিকে ছিলো। কেবলমাত্র রাজধানীর মতিঝিল, রমনা, তেজগাঁ প্রভৃতি থানা এলাকায় পুলিশের শক্ত নিয়ন্ত্রন ছিলো। আর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অতীতের মতো তেমন কিছু হয়নি। কাজেই কাদের পরামর্শে এবং কাদের আশ্বাসে বিএনপি হঠাত পিছুটান দিয়েছিলো তা জানতে চায় তাদেরই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীবৃন্দ। আপনি যদি আমার মতামত জিজ্ঞাসা করেন তবে আমি বলবো-বিএনপি কাউন্টার ইন্টিলিজেন্সের অর্থাৎ উল্টোমুখী গোয়েন্দাদের খপ্পরে পড়েছিলো।
আপনি যদি লক্ষ্য করেন তবে ইদানিং কালে বিএনপির বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যে একধরনের অসহায়ত্ব খুঁজে পাবেন। তারা যে কথা বলছে তা তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না। ঈদের পর দূর্বার গন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এই বক্তব্য যিনি বা যারা দেন আপনি তাদের কন্ঠ, মুখের অভিব্যক্তি এবং হাত, মাথা ও ঘাড় নাড়ানোর দৃশ্য গুলো লক্ষ্য করুন। দেখবেন ওগুলোতে কোন ছন্দ নেই, নেই দৃঢ়তা বা আত্মবিশ্বাসের কোন ছাপ। তাহলে ভবিষ্যত কি? বিএনপিকে সর্বপ্রথম ভুলগুলো স্বীকার করতে হবে। ভুল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অতীত ভুলের শিক্ষা থেকে নতুন করে কর্মপন্থা গ্রহন করতে হবে। এরপর তৃনমূল সংগঠিত করে চুপটি মেরে অপেক্ষা করতে হবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে- এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের আপোষহীন সেই তকমাটি ২০১৪ সালে কাজে লাগবে না। কারন গত ৩৪ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। বুড়িগঙ্গার পানি বিষ হয়ে গেছে- আওয়ামীলীগ সমুদ্র বিজয় করেছে- আরো কতো কি যে ঘটলো তা আমলে না নিয়ে অতীতের মনোভাব আঁকড়ে ধরে রাখলে কাজ হবে না।

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া