adv
২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘রিজওয়ানার স্বামীকে অপহরণে ‘র’ জড়িত থাকতে পারে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়তে সরকারকে বাধ্য করতে পারছে না জনগণ। এটিই জাতীয় ঐক্যমতে না পৌঁছার কারণ। এজন্য জনগণকে রাস্তায় নামতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস কাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেছেন। ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংকট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’। এতে সভাপতিত্ব করেন  সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এর সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান।
আলোচনায় অংশ নেন রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তক কবি ফরহাদ মজহার, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি শওকত মাহমুদ, ফোবানা নিউইয়র্ক-২০১৪ এর আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান হাসান,পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কামরুল ইসলাম খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ডা. রফিক চৌধুরী, অনলাইন পত্রিকা জাস্ট নিউজের সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম আবদুল্লাহ।
ফরহাদ মজহার বলেন, পরিবেশ আইনজীবী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে অপহরণের ঘটনা আমাদের চরমভাবে মর্মাহত করেছে। গুম, অপহরণের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
রিজওয়ানার স্বামীকে অপহরণের ঘটনার সঙ্গে ভারতের ‘র’ জড়িত থাকতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ফরহাদ মজহার বলেন, “যারা বর্তমান সরকারকে সমর্থন করছেন তাদের পরিবারের কেউ নিরাপদ নয়। আওয়ামী লীগ নামের সরকারটি জš§ থেকেই ফ্যাসিস্ট। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধংস করেছে। হিটলার ও মুসলিনীর ফ্যাসিজম থেকেও ভয়ঙ্কর আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজম। এই ফ্যাসিজমকে তাড়ানো রক্তাক্ত পথের মাধ্যম ছাড়া সম্ভব নয়।
ফরহাদ মজহার বলেন, অদ্ভুত এক দেশ যেখানে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তুলে নিয়ে তাদের দেশে চলে যাচ্ছে। স্বাধীন কোনো দেশে এটা চলতে পারে না। কেউ এখানে নিরাপদ নয়। লুটপাট ছাড়া কিছুই এই সরকার বাংলাদেশের সবকিছু লুট করে নিয়ে পরিত্যক্ত আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলে দেবে।
তিনি বলেন, একমাত্র দিল্লী ছাড়া কোনো দেশই এ সরকারকে গণতান্ত্রিক সরকার বলে মনে করে না। রাশিয়াসহ কিছু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ককে নষ্ট করছে। দলের ঊর্ধ্বে উঠে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে হবে। প্রবাসীদের নির্দলীয় অবস্থান থেকে গণতন্ত্রকে পে ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজের বিভাজনগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। প্রতিটি মানুষের কথা বলার অধিকার রা করা আমাদের গণতান্ত্রিক দায়িত্ব। গণতন্ত্র আমাদের অধিকার। এটাকে আমরা রাষ্ট্রের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না।
ফরহাদ মজহার বলেন, “বিচার চলাকালে আইন পরিবর্তন করে কাউকে ফাঁসি দেয়ার নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। ‘৭১ এ সেটি হয়নি। সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অনেক সময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণায় ধর্মনিরপে, সমাজতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ বর্তমান চার নীতি ছিল না। সেখানে ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। এর বাইরে যা যোগ হয়েছে তা দিল্লির সংযোজন।
 মানবাধিকার লঙ্ঘনে সরকারের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, “কিছু মানবার্ধিকার সংগঠন সরকারের অধীনে কাজ করছে। আর যারা নিরপেভাবে মানবাধিকারের পে কাজ করে তাদেরকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।
বর্তমান সংবিধান ফ্যাসিস্ট মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। একজন ব্যক্তির বক্তৃতা সংবিধানের মধ্যে ঢুকে গেছে। এটা কখনো সংবিধান হতে পারে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করতে হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সাড়ে তিন বছর মতায় থাকলেও শেখ মুজিব মেহেরপুরের মুজিবনগরে একদিনের জন্যও যায়নি। এটা নিয়ে নতুন বিতর্ক চলছে। জাতীয় সংসদে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন নিয়ে কথা না বলে কে কার বিরুদ্ধে কতটুকু কুৎসা রটনা করতে পারে সেটি চলছে।
বিচারকদের সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ  বলেন, জজ সাহেবদের বিবেক নাড়াচাড়া করে না সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। তাকে জামিন দিতে বিব্রতবোধ করলেও বেতন নিতে বিব্রত হন না বিচারকরা। প্রবাসী শ্রমিকদের ঘামে অর্জিত পয়সা দিয়ে সরকার কুইক রেন্টালের নামে কুইক পকেট ভর্তি করছে। সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, দেশে বর্তমানে শুধু গণতান্ত্রিক সঙ্কট নয়, রাষ্ট্রীয় সঙ্কট চলছে। বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদের চরম রূপ দেখিয়েছে। মানুষের সমাধানের জন্য নয়, সমস্যা জিইয়ে রাখার জন্য মতায় থেকে কাজ করছে সরকার। আদালতের স্বাধীনতার জন্য আমরা লড়াই করলেও আদালত গণমাধ্যম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের হেনস্থা করছে।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যমতে না পৌঁছার কারণ জাতীয় ঐক্যের সরকারকে জনগণ বাধ্য করতে পারছে না। এজন্য জনগণকে রাস্তায় নামতে হবে। দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বর্তমানে জেলে। সরকার নিজে অথবা আদালতকে দিয়ে গণমাধ্যম বন্ধ করছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ডা. রফিক চৌধুরী বলেন, সারা দেশে আজ গুম, খুন ও অপহরণের রাজনীতি চলছে। বিএনপি নেতা এম ইলিয়াসের মতো পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতা রিজোওয়ানার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, রাজনীতিতে শুধু অসহিষষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবই বিরাজ করছে না, রাষ্ট্রীয় মৌলিক বিষয় জাতীয়তা, জাতীয় স্লোগান, স্বাধীনতার ঘোষক, রাষ্ট্রীয় আদর্শ এমনকি স্বাধীনতার প-বিপ শক্তির কথা বলে জাতিকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। নিশ্চিত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। দিন দিন এ আশঙ্কা বাড়ছে।
তিনি বলেন, দলীয় বিভক্তির মধ্যেও বাংলাদেশের সিংহ ভাগ মানুষ শান্তি চায়। আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের এই আকাঙ্খার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হবে। এটা বাংলাদেশের সিংহভাগ নাগরিকের মতো প্রবাসীদেরও প্রাণের দাবি। 

 

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া