adv
২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যে কারণে কপাল পুড়লো তাদের

image_63894_0ঢাকা: নানা বাধা-বিপত্তি, বিতর্ক-সমালোচনা সরিয়ে দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করলেন শেখ হাসিনা। তার নতুন এই মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন নবম সংসদের আলোচিত-সমালোচিত ও প্রভাবশালী অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। যাদের অনেকেই মহাজোট সকারেরর মন্ত্রিসভায় এবং দলে দাপুটে নেতা হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত ছিল।

পাঁচ বছরে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া, অতিকথনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা, অদক্ষতা, মন্ত্রী হওয়ার পরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ঢাকায় বসে এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়া অঞ্চল বিবেচনা, তরুণদের সুযোগ দেয়ার বিবেচনা থেকেও মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন তারা।

তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার গঠন করেছেন শেখ হাসিনা। তার নতুন মন্ত্রী সভায় রয়েছেন ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও এবং ২ জন উপমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্য থেকে কয়েকজন মন্ত্রী করা হয়েছে। পাশাপাশি এবার প্রথম বারের মত প্রধান বিরোধী দল হওয়া জাতীয় পার্টিরও (জাপা) বেশ কয়েকজনকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।

নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হিরা, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ, আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. মজিবুর রহমান ফকির, শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই।

শুধু মন্ত্রিসভা থেকেই বাদ পড়েননি, দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি, সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার এনামুল হক, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া। স্বাস্থ্যের কারণে এবার দলের মনোনয়ন নেয়নি পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার বীরউত্তম। এছাড়া মহাজোট সরকারের জাতীয় পার্টির একমাত্র মন্ত্রী বানিজ্য মন্ত্রী জিএম কাদেরও এবার মন্ত্রীত্ব পাননি।

ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর: ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বির্তকিত মন্তব্যের কারণে বিব্রত অবস্থায় পরে সরকার। সাভারের রানা প্লাজার ভবন ধসে পড়ার ‘নারাচাড়া তত্ত্ব’ তিনি বলেছিলেন। সাবেক জাদরেল এই আমলা হওয়ায় দক্ষতার সঙ্গেই নিজের দায়িত্ব পালন করবেন এই প্রত্যাশাই ছিলো সরকারের উর্ধ্বতন মহলের। কিন্তু সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে বার বার আল্টিমেটাম, সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ক্যামেরার সামনেই সাগর-রুনি সম্পর্কে কটূক্তি বক্তব্যের মাধ্যমে শুধু নিজেকেই নয় হাস্য-কৌতুকের পাত্র করেছেন সরকার এবং দলকেও।

ডা. দীপু মনি: মহাজোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। গত পাঁচ বছরে বিদেশ ভ্রমণে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও সমুদ্রসীমা জয় ছাড়া বাংলাদেশের জয় শুন্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্ম্পকের টানাপোড়ন বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই মনে করেন। এছাড়াও বিদেশের সঙ্গে সর্ম্পক উন্নতির পরিবর্ততে তিনি অবনতি ঘটিয়েছেন বলেও অভিযোগ তুলেন অনেকে। তিস্তা চুক্তিতে ব্যর্থতার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শামসুল হক টুকু: দশম নির্বাচনে শামসুল হক টুকু ও তার ছেল ভোট ডাকাতি করে সমালোচিত হয়েছেন। এছাড়াও নিজের বাঁচালতা (সর্বশেষ কাদের মোল্লার ফাসির সময় বলে দেয়া), ক্ষমতার অপব্যবাহর এবং নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর।

অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন: মহাজোট সরকারের প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম ও ঈদের ছুটিতে বাড়িতে তালা দেয়ার কথা বলে সমালোচনা ঝড় তুলেন তিনি। এই সমালোচনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় দল এবং সরকার। এরপর মন্ত্রিসভার রদবদলে স্বরাষ্ট্রের পরিবর্তে দায়িত্ব পান ডাক ও টেলিযোগাযোগের। অদক্ষতার কারণেই তাকে বাদ রাখা হয়েছে তৃতীয় বারের আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত: রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের রেলের অর্থ কেলেঙ্কারীর কারণেই এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।

জাহাঙ্গীর কবির নানক: স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তার কন্যার কোম্পানির কাছে সরকারি অর্থ পাওয়ার খবর পত্র-পত্রিকায় এসেছে।

ড. আব্দুর রাজ্জাক: ক্লিন ইমেজের বলে পরিচিত ছিলেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু শেষ সময়ে এসে খাদ্যে অধিদফতরে নিয়োগে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। যা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয় বেশ ফলাও করে। সে নিয়োগ পক্রিয়াটি এখনো ঝুলে আছে। তবে দলের এক প্রভাবশালী নেত্রীর বিরোধীতার কারণেই তার কপাল পুড়ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

হাছান মাহমুদ: আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি ছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে। ড. হাছান মাহমুদের স্ত্রীর নামে ব্যবসা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। দেশের বাইরে আমেরিকায় তিনি বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। আর সরকারের সফলতা প্রচারে ব্যর্থতারও দায় চাপানো হয় এই প্রচার সম্পাদকের ওপর।

আফম রুহুল হক: আফম রুহুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড়সহ অভিযোগ। তার নিজের দুর্নীতি, স্বাস্থ্য খাতে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও দাপুটের কারণে কপাল পুড়িয়েছেন। মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে এপিএস ছাত্রদল নেতা খোকনও আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। ঢাকায় কিনেছেন ফ্ল্যাট বাড়ি। ডা. আ ফ ম রুহুল হক কারণে সাতক্ষীরা মূলত জামায়াত-শিবিরের শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে ভূমিকা ছিল না তার।

রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু: প্রশাসন বেষ্টিত রাজনীতি,আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুরত্ব, নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হত্যাকান্ডসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার অভিযোগ ও মামলায় মন্ত্রীর ভাই সালাউদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চু ,পিএস মুরাদ সহ একাধিক আওয়ামীলীগ নেতার নাম উঠে আসে।

আব্দুল মান্নান খান: গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন আব্দুল মান্নান খান। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অহংকার এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে তিনি ফ্লাট ও প্লট বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তাছাড়া নামে-বেনামে সরকারি বাড়ি কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছেন। যা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে।

এ ছাড়া বয়সজনিত কারণে এ কে খন্দকার, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, রমেশ চন্দ্র সেন ও রেজাউল করিম হীরা বাদ পড়েছেন। আর ক্ষমতার পালাবদলে বাদ পড়েছেন শফিক আহমেদ, আফসারুল আমীন, দিলীপ বড়ুয়া, আবদুল লতিফ বিশ্বাস, রেজাউল করিম হীরা, এ এইচ মাহমুদ আলী, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, মন্নুজান সুফিয়ান, এ বি তাজুল ইসলাম, শাহজাহান মিয়া ও দীপঙ্কর তালুকদার

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ
January 2014
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া