হরতালে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ
ঢাকা: রোববার বেলা সাড়ে তিনটায় রাজধানীর সেগুনবাগিচা মোড়ে মুখ ভার করে বসে আছেন খাজা (মুখরোচক মিষ্টি জাতীয় খাবার) বিক্রেতা আবুল কাশেম।
তিন হাজার টাকার খাজা কিনে ফেরি করে বিক্রি করতে বের হয়েছেন সেই ভোর ছয়টায়। দুপুর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ২শ’ টাকা। তবে হরতাল না থাকলে এ সময়ের মধ্যেই প্রায় দেড়হাজার টাকার বেশি বিক্রি হতো বলে তিনি জানালেন।
শুধু আবুল কাশেমই নন রোববার রাজধানীর বিভিন্ন মোড়, ফুটপাত ও বাজার ঘুরে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় একই চিত্র। সারাদিনের পরিশ্রমের আয় দিয়ে যাদের সংসার চলে তারা সবাই সংসারের খরচ যোগাড় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান হরতালে।
হরতালের পক্ষে নন এসব খেটে খাওয়া মানুষেরা। তাদের সবারই এক কথা, যারা হরতাল ডাকে, তারা কোনোদিন না খেয়ে থাকে না। না খেয়ে থাকতে হয় সাধারণ মানুষদেরই।
৫৯ বছর বয়সী আবুল কাশেম বলেন, দুপুর পার হলেও পেটে খাবার দিতে পারিনি। বিক্রিও নাই, খাওয়াও নাই। এই পেশার আয়ের ওপর ভর করেই সংসার চলছে। হরতালের কথা শুনলেই সংসারের খরচ কিভাবে যোগাড় হবে এই দুশ্চিন্তা মাথা ঘুরপাক খায়। একেবারেই কম বিক্রি হলে সারাদিনের খাবার খরচ যোগাড় করা সম্ভব হয় না। ফলে না খেয়ে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, না খেয়ে হেঁটে হেঁটে খাজা বিক্রি করার সময়ে মনে হয় না আর কাজ করি। প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়।
পরিবারের কথা বলতেই মুখটা কালো হয়ে যায় আবুল কাশেমের। অন্য দিকে চেয়ে থেকে তিনি বলেন, গতকাল (নোয়াখালী) দেশ থেকে ছেলে ফোন করে বললো বাজার শেষ হয়ে গেছে। বলেছি ঋণ করে অথবা ধার করে বাজার করতে।
মহাখালী কাঁচাবাজার সংলগ্ন ফুটপাতে কাঁচামালের ছোট দোকান দিয়ে বসে আছেন আলতাব হোসেন। তিনি বলেন, বেচাকেনা একেবারেই নেই। সংসারের খরচের চিন্তা করে অনেক ভয়ে ভয়েই দোকান দিয়েছি। কিন্তু তেমন কিছুই বিক্রি হয়নি।
তিনি বলেন, এই ছোট দোকানের আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। লোকসমাগম একেবারেই কম। এরকম দুই একদিন চললে পরের দিনগুলো না খেয়েই থাকতে হবে।
জানা যায়, হরতাল না হলে আশপাশের অনেক এলাকা থেকে দিনমজুরেরা কাজ করতে আসেন রাজধানীতে। তারাও হরতালের ফাঁদে পরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
দিনমজুর হান্নান জানান, তার সঙ্গে অনেক দিনমজুর কাজ করেন। কিন্তু হরতালের কারণে কাজ পাওয়া যায় না বলে তারা নগরীতে আসেন না। হরতাল শেষে অনেকেই তাদের আর্র্থিক কষ্টের কথা বলেন।
বর্তমানে দেশের পরিস্থিতির বিষয়ে তৃণমূল এসব মানুষের থেকে মতামত জানতে চাইলে সবাই একবাক্যে জানান, দুই নেত্রীর এক জায়গায় বসে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিলেই আর সমস্যা হবে না।
এছাড়া দেশে যেন সহিসংতা আর না হয় এবং তাদের মতো সাধারণ মানুষদের যেন না খেয়ে থাকতে হয় সেটা নিশ্চিত করতে নেতা নেত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানালেন খেটে খাওয়া এসব মানুষ।