adv
২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব – ইসলামি ব্যাংকের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ

ISLAMI BANK TOWERনিজস্ব প্রতিবেদক : প্যারিসে ভয়াবহ হামলার প্রোপটে জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত ৪০টি দেশের নাম প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ৷ সেখানে বাংলাদেশ না থাকলেও, কয়েকটি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থার বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ আছে।
২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের তিনজন আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডকে ৷ তারা ঐ সংগঠনটিকে ব্যাংকের মাধ্যমে মোট ১ কোটি ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে র‌্যাব। এই তিনজন আইনজীবী হলেন – ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, লিটন এবং বাপন৷

বাংলাদেশের তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান – ইসলামী ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বা এসআইবিএল-এর বিরুদ্ধেও আছে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির এক প্রতিবেদনেও এই তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে৷

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘‘ইসলামী ব্যাংকে এমন কিছু অ্যাকাউন্ট হোল্ডার পাওয়া গেছে, যাদের নাম ছিল জাতিসংঘের সন্দেহের তালিকায়৷ এ সব অ্যাকাউন্টের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ‘লুকিয়েছিল' ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপ।

সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দণি ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে। বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে। সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
এছাড়া অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতও তার গবেষণায় বলেছেন, ‘ইসলামী ব্যাংক জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংক নানা ধরণের অদৃশ্য খাতে অর্থ খরচ করে। তাই তাদের পে জঙ্গি অর্থায়ন অসম্ভব কিছু না৷

সরকার জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে ২০১২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ, সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন অধ্যাদেশ-২০১২ এবং অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা অধ্যাদেশ-২০১২ নামে তিনটি অধ্যাদেশ জারি করে৷

এছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সম্পর্কিত মামলা দায়েরের জন্য দু'টি পৃথক যৌথ তদন্ত ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত ইউনিটে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবি আর) ইন্টেলিজেন্স ইউনিট রয়েছে৷

এদিকে মুদ্রা পাচার ও জঙ্গি বা সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে বাংলাদেশের নেয়া পদেেপর সত্যতা যাচাইয়ে গত অক্টোবর মাসে এশিয়া প্যাসিফিক গ্র“প (এপিজি) অন মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত একটি বিশেষজ্ঞ দল প্রায় দু'সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থান করে৷ জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সমতা নিয়ে তখন প্রশ্নও তোলে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ জার্মান নিউজ পোর্টাল ‘ডয়চে ভেলে’কে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়ন হয় প্রধানত ইনফর্মাল সেক্টরের মাধ্যমে৷ ব্যাংকের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা এখনো তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারেনি৷ জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে এদের সমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷'

তিনি বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থের লেনদেন পর্যন্ত ব্যাংক নজরদারি করতে পারে৷ কোন খাতে শেষ পর্যন্ত এই অর্থ ব্যবহার করা হয়, তা বের করার মতো গোয়েন্দা দতা এখনো বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর হয়নি।

তার কথায়, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক-এ জঙ্গি অর্থায়ন বিরোধী ইন্টেলিজেন্স সেল গঠন করা হয়েছে৷ এনিয়ে দুদক কাজ করছে, কাজ করছে পুলিশের বিশেষ তদন্ত বিভাগও৷ তবে তাদের দক্ষ হতে সময় লাগবে।ইসলামি ব্যাংকের আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এবিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জঙ্গি দমন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু জানান, তারাই বাংলাদেশ ব্যাংককে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেলেন৷ তদন্তে দেখা গেছে ইসলামি ব্যাংক তাদের লাভের ৮০ ভাগ ইসলামি ব্যাংক ফাউন্ডেশন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে রাখে৷ এই অর্থ জঙ্গিবাদসহ নানা খাতে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ব্যয় করা হয়৷ মাত্র ২০ ভাগ ব্যাংকে জমা রাখে৷ এখন থেকে ব্যাংকের কোন লভ্যাংশ বা মুনাফা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে সরানো যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া করা যাবেনা এধরনের আর্থিক লেনদেন৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই এই নির্দেশ জারি করেছে ইসলামি ব্যাংকের ব্যাপারে৷ তিনি জানান, অন্য কোন বাংক যাতে জঙ্গি অর্থায়ন করতে না পারে সেজন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংক জোরদার করেছে মনিটরিং৷

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরেও তারা বিভিন্ন কৌশলে সক্রিয় রয়েছে৷ বিশেষ করে শিা প্রতিষ্ঠানে তাদের তৎপরতা ল্য করা গেছে৷ এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সভায়৷
স্বরাষ্ট্রসচিব আব্দুস সোবহান শিকদার জানান, জঙ্গি ততপরতা এবং জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধে নতুন আইন করা হচ্ছে৷ ১৯৭৪ সালের এক্সট্রাডিশন অ্যাক্ট এবং সন্ত্রাসদমন আইন এক করে জঙ্গি দমনে নতুন এই আইন প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে৷

জয় পরাজয় আরো খবর

adv
সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাতকার
adv
সব জেলার খবর
মুক্তমত
আর্কাইভ


বিজ্ঞাপন দিন

adv

মিডিয়া