২৭ সেপ্টেম্বর হাসিনা-মোদি বৈঠক
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে ২৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন দুপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন অফিস ও ভারতের কন্স্যুলেটের কর্মকর্তারা। তারা ইতোমধ্যে বৈঠকও করেছেন। এদিকে বৈঠকে কি কি বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হবে তা ঠিক করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী ভারত যাচ্ছেন ২০ সেপ্টেম্বর।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদি ভারতে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই প্রথম দেখা হতে যাচ্ছে এই দুই নেতার। নরেন্দ্র মোদি জয়ী হওয়ায় ও ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শেখ হাসিনা তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠালেও এর আগে দেখা হয়নি। তাদের দুই জনের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে দুই দেশ। দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করা ছাড়াও তা বাড়ানোর জন্য একে অপরকে কিভাবে আরো সহায়তা করতে পারেন সেই বিষয়েও আলোচনা করবেন। তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত সমস্যা, ট্রানজিট, বিদ্যুতসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে আগাম নির্বাচনের বিষয়ে এখনই কিছু বলবেন না। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরো সুদৃঢ় করণ ও জনগণের পাশে তার সরকার রয়েছে এটা ইঙ্গিত দিবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেস সরকারের সব কর্মকাণ্ড মোদি জানলেও এটা নিয়ে আপাতত তিনি কোন বিরোধীতা করতে চাইছেন না। বরং বর্তমান সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেই তিনি তার দেশের স্বার্থ সংশ্লিস্ট বিষয়গুলো নিয়ে দেন দরবার করতে চাইছেন। বাংলাদেশ থেকে যতখানি নেয়া সম্ভব তা নিয়ে তাদের দেশের ও জনগনের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইছেন। আবার ভারতের মোদি সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য, ভারত যাতে আগাম নির্বাচনের জন্য তার সরকারের উপর কোন চাপ তৈরি না করে সেই নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য শেখ হাসিনাও কিছুটা ছাড় দিতে পারেন।
সূত্র জানায়, নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়ার মতো ৫ জাুনয়ারির ওই নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন না। তা না থাকলেও এখনই ওই সব নিয়ে চাপ তৈরি করতে চাইছেন না সরকারের উপর। তবে আÍর্জাতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ও তাল মিলিয়েই সিদ্ধান্ত নিবেন। কৌশল হিসাবে তিনি বর্তমান সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্য কোন বিরোধ চাইছেন না। সূত্র জানায়, মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকটি সফল হলে আগামী দিনে শেখ হাসিনার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শেখ হাসিনা মোদির সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়াও মোদি সরকার যাতে বাংলাদেশেও তাদের সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃৃৃদ্ধি করে সেই ব্যাপারেও অনুরোধ করবেন। সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে। এই বৈঠক নিয়ে ব্যাপক কৌতুহলও রয়েছে নানা মহলে। ইতোমধ্যে ওই বৈঠক নিয়ে নিউইয়র্কস্থ’ জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং ভারতের কন্স্যুলেটের কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ এই বৈঠকের আগে ২০ সেপ্টেম্বর ভারত যাচ্ছেন। সেখানেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করবেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে তাও চূড়ান্ত করবেন।
জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানা গেছে, জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্ক পৌঁছুবেন। তিনি ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টায় এ্যামিরাতের একটি ফ্লাইটে জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। এরপর তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও ২৭ সেপ্টেম্বর তার সবচেয়ে ব্যস্ততম দিন। ওই দিন সকালে শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এরপর দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠক করবেন। বিকেলে ম্যানাটনের সেন্ট্রাল পার্কে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র, সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। একই দিনে রাতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কর্তৃক গণসংবর্ধনা সভায় যোগ দেবেন। টাইমস স্কোয়ারের মেরিয়ট মার্ককুয়েসে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ইতোমধ্যে হল বুকিং দিয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে সবাই যাতে থাকেন সেই জন্যও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এনিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতিও চলছে।