অবশেষে নির্বাচনী নৌকায় জাপা!
ঢাকা: দেশে বহু নাটক মঞ্চায়নের পর দেশের বর্তমান সময়ে আলোচিত দল জাতীয় পার্টি (জাপা) আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে! এ নির্বাচনে পার্টির মহাসচিবসহ সবাই যাচ্ছেন। এজন্য পার্টি থেকে যাবতীয় দিক নির্দেশনাও পৌঁছে গেছে নেতাদের কাছে। নির্বাচনে যেতে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ফাস্ট লেডি এরশাদ পত্নী রওশন এরশাদ। তবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে এমন ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হবে না বলে জানা গেছে।
পার্টি সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য এখন থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পার্টি থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রওশনের গুলশান-২ এর বাসায় পার্টির মনোনয়নপত্র দাখিল করা নেতারা আসছেন এবং তারা তার কাছে থেকে নির্দেশনাও নিয়ে যাচ্ছেন।
জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত ১২ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে র্যাব-২ এর হাতে আটক হন। এরপর তাকে নেয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। যদিও প্রশাসনের দাবি এরশাদকে চিকিৎসার জন্য সেখানে রাখা হয়েছে। কিন্তু এক বিবৃতিতে তাকে আটক রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন এরশাদ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এরশাদ আটক হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যানের অবর্তমানে পাটির সার্বিক দায়িত্ব পালন করছেন রওশন। তিনি পার্টির নেতাদের নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বেই নির্বাচনে যাচ্ছে জাপা। তবে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হবে না বলে জানা গেছে। পার্টির চেয়ারম্যান ‘অসুস্থ’ থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে কিছুদিন আগে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ তার দলের নেতাদের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার জন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য নির্দেশ দিলে অনেকে প্রত্যাহার করেন। কিন্তু পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার নির্বাচনে যাচ্ছেন কি না তা নিয়ে কখনও মুখ খোলেননি। কৌশলে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। আর এ কারণেই তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হয়েছেন।
পার্টি সূত্র জানায়, এরশাদকে হাসপাতালে নেয়ার পরদিন থেকেই রওশনের বাসায় দফায় দফায় বৈঠক করেন সিনিয়র নেতারা। আর এসব বিষয় নিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে রওশন এরশাদের নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ ছিল। তিনি এরশাদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা রওশনকে জানান। কিন্তু পার্টির স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়নি। সর্বশেষ গত সোমবার নিজেই এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে সিএমএইচে যান রওশন এরশাদ। সেখানেও দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে দিক-নির্দেশনা দেন এরশাদ।
তবে জাপা যে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তা বৃহস্পতিবার পার্টির কয়েকজন নেতা পরিষ্কার করেছেন। বিকেলে রাজধানীর ফরাশগঞ্জ এলাকার লালকুঠিতে এক নির্বাচনী প্রচারাভিযানে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, ‘এরশাদের নির্দেশে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি।’
ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া এই নেতা আরও বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান আমাদের নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিলেন। তার নির্দেশে আমরা মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলাম। বিভিন্ন কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। তাই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। তাছাড়া গণতন্ত্র রক্ষা ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’
এ সময় ফিরোজ রশিদ আরো বলেন, ‘এরশাদের অনুপস্থিতিতে রওশন এরশাদ দলের কাণ্ডারী। অতীতের মতো রওশন এরশাদ দলের হাল ধরেছেন। এরশাদই তাকে দলের হাল ধরার নির্দেশ দিয়েছেন।’
এদিকে পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব সেলিমউদ্দীন বাংলামেইলকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে। পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হওলাদারও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি গতকাল (বুধবার) স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি দেখা করে এসে আমাদেরকে বলেছেন, ম্যাডামের (রওশন) নেতৃত্বে নির্বাচনে যেতে স্যার নির্দেশ দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থতিতে রুহুল আমিন হওলাদার নির্বাচিত হয়ে গেছেন। তাই তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং জাতীয় পার্টির সব নেতারা আমাদের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়ে নির্বাচনে যাচ্ছেন।’
জাপার যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত আলী তোতা বলেন, ‘আমরা দলের চেয়ারম্যান এরশাদের নেতৃত্বেই নির্বাচনে যাচ্ছি। তিনি অসুস্থ বিধায় সিনিয়র নেতারা আমাদের সমানে থাকছেন। এখানে কোনো নেতার দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই।’
এসময় তিনি জানান, জাতীয় পার্টি ৮৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
তবে পার্টির অনেক নেতা বলছেন, পার্টি যদি নির্বাচনে না যায় তবে নির্ঘাত পার্টির চেয়ারম্যানকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হবে। নয়ত তার নামে দেয়া সব মামলা আবার জোরালো করে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে।