সর্বদলীয় সরকারের ধারণাটি ভুল
নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটিতে ধারণাগত ভুল আছে। বরং এটিকে বলা উচিত কেবল নির্বাচনকালীন সরকার।কেননা নামে সর্বদলীয় বলা হলেও শেষ পর্যন্ত এই সরকারে চার থেকে পাঁচটি দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
বর্তমান নবম সংসদে আটটি দলের প্রতিনিধিত্ব আছে। এগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। এর বাইরে সাম্যবাদী দল থেকে কেউ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও এই দলের প্রধান দিলীপ বড়ুয়া বর্তমান মন্ত্রিসভায় আছেন। অর্থাৎ তিনিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অংশ। সে হিসেবে সংসদে দল হয় নয়টি। সুতরাং সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে হলে এই নয়টি দল থেকেই অন্তত একজন করে প্রতিনিধি থাকা বাঞ্ছনীয়।
অবশ্য নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের ধারণাটি আওয়ামী লীগ যখন দেয়া শুরু করেছে, তখন সরকারের তরফে বলা হয়েছে, সব দলকে এই সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও জামায়াতে ইসলামিকে নেয়া হবে না। যদি নৈতিক কারণে সরকার জামায়াতকে এই সরকারে অন্তর্ভুক্ত নাও করে, তারপরও দল থাকে আটটি। কিন্তু সর্বদলীয় সরকারে আটটি দল থাকছে না।
দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এটি মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে, বিএনপি ও তার শরিক দল জামায়াত এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিচ্ছে না।এলডিপিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাবে না।
মহাজোটের সবচেয়ে বড় শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছেন,আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই তিনি মহাজোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে ধারনা করা যায় যে, তিনিও নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেবেন না।
বাকি থাকে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দল। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে। এর আগে ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দলের অনুমতি না পাওয়ায় তিনি মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে পারেননি। সুতরাং এবার নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রস্তাব পেলেও সেখানে দলের অনুমতি পাবেন কি না- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বাকি থাকে জাসদ। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বর্তানে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবেন বলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। দলীয় কোটায় সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, যিনি বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী, তিনিও থাকতে পারেন। তার মানে নির্বাচনকালীন সরকার হচ্ছে তিন কি চার দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে।
বর্তমান সংসদে একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আছেন, তিনি ফজলুল আজিম। যদি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হয়, সেখানে ফজলুল আজিমকেও রাখা উচিত। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তার অবস্থান বিরোধী দলের মতোই।সুতরাং প্রস্তাব পেলেও তিনিও এই নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেবেন বলে মনে হয় না।
এরকম পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে, সেটিকে সর্বদলীয় না বলে বরং নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার বলাই শ্রেয়